সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম : মির্জা ফখরুল

 

ঢাকা প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের লজ্জা-শরম কিছু নেই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম। নমরুদ-ফেরাউন, হিটলার, মুসোলিনি এমনকি স্বৈরাচার এরশাদও টিকে থাকতে পারেননি। এদেশের মানুষ কিন্তু সংগ্রামী। আমাদের আন্দোলনে হয়তো ভাটা পড়েছে। কিন্তু থেমে যায়নি। আন্দোলন চলছে।
শনিবার (১১ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক নেতাকর্মী এখনো জেলে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে আছেন। তাকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই। তারা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছে। তারা দেশকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের বাধ্য করবেন না উত্তাল তরঙ্গ তৈরি করতে।
খালেদা জিয়া শারীকিভাবে অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের মজলুম নেত্রী নন। তিনি সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, আত্মত্যাগকারী নেতাদের অন্যতম। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা ও ফিরে পাওয়ার জন্য আজীবন লড়াই করছেন। যিনি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। কিন্তু দানব সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ৫ বছরের সাজা পরবর্তীতে দশ বছর করা হয়েছে। অথচ মিথ্যা মামলায় অনেকে জামিন পেলেও খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয় না। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কিন্তু তাকে মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ সরকার মনে করে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের মসনদ টিকে থাকবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে ভেসে যাবে। সেজন্য খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা হয়েছে। আমি খালেদা জিয়াসহ সব আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টিকেই আছে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করে। নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে মিথ্যা মামলা ও আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নিদারুণভাবে পণ্ড করে দিয়েছে। তারা এভাবে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও গুম-খুন করে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের আন্দোলন কখনই স্তিমিত করা যাবে না। অতীতেও যায়নি।
যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে লড়াই সংগ্রাম করেছি। আজকে দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর হলেও দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০০৮ সাল থেকে দেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে না। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় এসে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে ’৭৫ সালের মতো আবারও একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। সেটা হলো গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল। সুতরাং তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। না হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি যাবে।
‘বিএনপি না কি সন্ত্রাস করছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সন্ত্রাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম। আপনারা মওলানা ভাসানীকে মার দিয়ে রূপমহল সিনেমা হল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পরে ভাসানী বাংলাদেশ ন্যাপ করেছিল। পাকিস্তান আমলে ডেপুটি স্পিকারকে পিটিয়ে কারা হত্যা করেছিল সেটা ভুলে যাইনি। গত ১৮ বছর ধরে দেশের জনগণের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে বাকশাল কায়েমের চূড়ান্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। মানুষ ভোটাধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সাধারণ মানুষ বাজারে গেলে চাল, ডাল, পেয়াজ-রসুন কিনতে পারে না। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। রেলের ভাড়া বাড়ছে। রিকশাওয়ালা, মধ্য বিত্তরা ঠিকমতো খেতে পারে না। তারাও খাওয়ার মেন্যু পরিবর্তন করেছে। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক লুট পাট করছে নতুন আইনের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সহযোগী হয়েছে। তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোথায় যাবেন? আসলে আমরা নিজ দেশে পরবাসী। বিমানবন্দর গুলোতেও হয়রানি করা হয়। তাহলে দেশ চালাচ্ছে কে? আমার মনে হয় অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছেন। এখানে জড়িত আছেন দেশের পুলিশ, প্রশাসনসহ অনেকেই। আজকে যুবকদের চাকরি হয় না। বিএনপি করলে তাদের চাকরি নেই। কারও বাবা-চাচা বা পরিবারের কেউ বিএনপি করলে চাকরি নেই। বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকরি দেয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তো নেই। এখন আবার ডামি নির্বাচন শুরু হয়েছে। মানে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে আর তাদেরই লোকজন বিরোধী প্রার্থী হবে। এখানে কিছু গৃহপালিত দলও আছে। একটা ক্যারিকেচার বা তামাশা শুরু করেছে। এজন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না ও শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, গোলাম মাওলা শাহিনসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও যুবদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.