বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চেস্টার গ্রিফিথস লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন চিকিৎসক। তিনি দাবানল থেকে ঘরবাড়ি রক্ষায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লড়াই করেছেন। দাবানলের সঙ্গে তার লড়াইয়ের সেই কাহিনী এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি।
ব্রেইন সার্জন গ্রিফিথস বিবিসি-কে জানান, দাবানল মোকাবেলায় গত ১৫ বছর ধরে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের পশ্চিমাঞ্চলের শহর মালিবুর বাসিন্দা গ্রিফিথস (৬২), তার ছেলে এবং এক প্রতিবেশী কর্তৃপক্ষের সরে যাওয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করে পলিসেইডস থেকে ধেয়ে আসা আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না জরুরি পরিষেবা তাদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিবিসি টুডে প্রোগ্রামে গ্রিফিথস বলেন, আমরা সব সময়ই জানতাম একদিন আগুন লাগবে – কিন্তু কখন আগুন লাগবে তা আমরা জানতাম না। আমরা কখনই কল্পনা করিনি এটি এমন বিপর্যয়কর এবং সর্বনাশা হবে।
গ্রিফিথস গত সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আগুনের ভয়াবহতা দেখেন। তিনি বলেন, বাড়িগুলো এমন ভাবে ভেঙে পড়ছিল যেন তাসের ঘর।
সৌভাগ্যক্রমে, গ্রিফিথস এবং তার প্রতিবেশী ক্লেটন কলবার্ট এই দাবানল মোকাবেলায় আগেই একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এমনকি আগুনের ভেতর কাজ করার সময় ব্যবহার করতে পারেন এমন বিশেষ ধরণের পায়ে পরা মোজাও তারা জোগাড় করে রেখেছিলেন।
গ্রিফিথস, তার ছেলে এবং কলবার্ট আগুনের উপর পানি ছিটানোর জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টের সঙ্গে চারটি হোসপাইপ সংযুক্ত করে কাছের একটি বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর মাটিতে লাগা আগুন নেভানোর জন্য ময়লা ব্যবহার করেছিলেন। প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে জ্বলন্ত বস্তুর উপর বৃষ্টিপাতের মত পানি ছড়াতে থাকেন তারা।
টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিজেরাই এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে বাড়িঘর রক্ষা করেছেন তিনজন। এরপর সদ্যই তারা দমকলকর্মীদের সঙ্গে আগুন নেভাতে সহায়তা করতে যোগ দিয়েছেন। কারণ এই আগুন এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে যে, এক সপ্তাহে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে দমকলকর্মীদের। সরঞ্জামও হয়ে পড়েছিল অপ্রতুল।
গ্রিফিথস বলেন, দমকল বিভাগ মনে করেছিল সব বাড়িই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কেন এত ব্যস্ত ছিল তা তিনি ‘পুরোপুরি বোঝেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণেই বিপদ আসার আগে প্রশিক্ষণ নেওয়া, এমনকি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকা এবং সত্যিকার অর্থে সবার এগিয়ে আসা কত গুরুত্বপূর্ণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল কর্মীরা এখনও বড় দুটো দাবানল এবং দুটো ছোট দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিবিসি লিখেছে, শহরের পশ্চিম দিকে স্যান্টা মনিকা এবং মালিবুর মধ্যে জ্বলতে থাকা পলিসেইডস এর আগুনে ২৩,০০০ একরেরও বেশি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানল।
ইটন ও পলিসেইডস এর ফায়ার জোনে দাবানলে কমপক্ষে ২৪ জন মারা গেছেন এবং এখনও পর্যন্ত ২৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বিপজ্জনক তীব্র ঝড়ো বাতাস সোমবারেই ফিরে আসতে পারে বলে সতর্ক করা হয়। এই বাতাস দাবানল আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে দুটো জায়গায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা এতে ব্যাহত হতে পারে।
তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পরিষেবা তাদের পূর্বাভাসে জানায়, স্যান্টা অ্যানা বাতাস আবার সোমবার থেকে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৭০ মাইল বেগে বইতে শুরু করবে আর বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় শক্তির বাতাস মোকাবেলায় ‘জরুরি প্রস্তুতি’ নেওয়া হচ্ছে। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.