বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এ বার রুশ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পর্নোগ্রাফির আসক্তি বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাদের নেশা ছাড়াতে আকর্ষণীয় বিকল্প খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মাদকের মতো পর্নোগ্রাফির নেশায় ধীরে ধীরে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে কৈশোর-যৌবন। শুধু তা-ই নয়, ‘নীল ছবি’ ধ্বংস করছে সামাজিক মূল্যবোধ। বিষয়টি নজরে আসতেই সচেতন হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। যুব সমাজকে দ্রুত পর্নের নেশা থেকে মুক্ত করতে ‘প্রতিষেধক’ খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নীল ছবি দেশটির ভিত পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুতিন। পাশাপাশি, পর্নোগ্রাফির নেশা ছাড়াতে তরুণ-তরুণীদের জন্য ভালো বিকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।
চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর রাজধানী মস্কোয় বার্ষিক ‘ডিরেক্ট লাইন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে অন্তত চার ঘণ্টা ছিলেন তিনি। পর্নোগ্রাফি কীভাবে রুশ সমাজকে ভেতর থেকে ধ্বংস করছে, ওই অনুষ্ঠানে সে কথাই বলতে শোনা গেছে তাকে।
পাশাপাশি পর্নোগ্রাফির বিকল্প কেমন হবে, তারও একটি রূপরেখা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। নীল ছবির পরিবর্তে আরও আকর্ষণীয় কিছু আমজনতার সামনে আনার কথা বলেছেন তিনি। তার ওই মন্তব্যের পর রাশিয়ায় পর্নোগ্রাফি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে সরকারিভাবে এই নিয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ‘রাশিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মস্কোর অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র আমাদের ব্যাপার নয়। পর্নোগ্রাফির বিষ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য দেশেও এই সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। তবে রুশ যুবকদের এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের সামনে যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি রয়েছে, পর্নোগ্রাফির জন্য সেটা আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না।’
এর পরই পর্নোগ্রাফির নেশা ছাড়াতে বিকল্পের কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। নীল ছবি নিষিদ্ধ করার থেকে আরও আকর্ষণীয় কিছু দিয়ে আমজনতার, বিশেষত যুব সমাজের মন বদলাতে চাইছেন তিনি। তার কথায়, ‘সাধারণভাবে সবাই হয়তো পর্নোগ্রাফিকে নিষিদ্ধ করার কথাই বলবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পর্ন সাইটের থেকে আরও আকর্ষণীয় কিছু একটা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটাই পর্নোগ্রাফির আসক্তি কমাতে সাহায্য করবে।’
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন পুতিন। গত অক্টোবরে হওয়া ব্রিকস সম্মেলনের আগে ভারতীয় চলচিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। রাশিয়ায় আরও বেশি সংখ্যায় ভারতীয় সিনেমা দেখার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে। পাশাপাশি ব্রিকসভুক্ত দেশগুলির চলচ্চিত্র উৎসবের প্রস্তাব করেছেন মস্কোর সর্বময় কর্তা।
সম্প্রতি রাশিয়ায় জন্মহারের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। অফিসে মধ্যাহ্নভোজ ও কাজের ফাঁকে কফি পানের সময়ে দেশের নাগরিকদের সঙ্গমের পরামর্শ দেন তার মন্ত্রী। ওই মন্তব্যের পর রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে আসেন ক্রেমলিনের রাষ্ট্রপ্রধান।
কর্মক্ষেত্রে সঙ্গমের কথা বলায় পুতিনের সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু তার পরও নিজের অবস্থান বদলাননি তিনি। বর্তমানে রুশ মহিলাদের জনপ্রতি সন্তানধারণের ক্ষমতা ১.৫-এ নেমে এসেছে। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এটি ২.১ হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। তরুণীদের মধ্যে মা হওয়ার প্রবণতা কমার নেপথ্যে পর্নোগ্রাফির আসক্তিকে দায়ী করেছেন তারা।
সমীক্ষক সংস্থা ‘স্ট্যাটিস্টা’র সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে পর্ন সাইটগুলির দর্শকসংখ্যা শত কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ বছরের মে পর্যন্ত প্রতি মাসে ‘পর্নহাব’ সাইটে চোখ রেখেছেন ৫৪৯ কোটি মানুষ। আর ‘এক্স ভিডিও’র দর্শকসংখ্যা ছিল ৪০২ কোটি। ইন্টারনেট সার্চিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রাপ্তবয়স্কদের ভিডিও সর্বাধিক খোঁজার তালিকায় রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাশিয়ার মতো পর্নোগ্রাফির আসক্তির সমস্যা রয়েছে আমেরিকাতেও। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নীল ছবি নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পর্নোগ্রাফি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে। চীনে নীল ছবি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এটিকে আংশিক ভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। সেখানে পর্নোগ্রাফি দেখতে হলে সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদনকারীর বয়স এবং মানসিক স্বাস্থ বিবেচনা করে তবেই এর অনুমতি দিয়ে থাকে বিশ্বের একমাত্র ইহুদি দেশের সরকার।
ডিজিটাল যুগে পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় জনস্বার্থ মামলা। ২০১৪ সালে শীর্ষ আদালতকে এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করে কেন্দ্র। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.