রাবি উপ-উপাচার্যের কী হবে এখন?


রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে সাদিয়া নামের এক ছাত্রীর (তিনি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিপ্রার্থী ওই একই বিভাগের ৩৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুরুল হুদার স্ত্রী) ফোনালাপের ৪৮ সেকেন্ডের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে।

সেখানে ওই ছাত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক জাকারিয়ার অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে হওয়া ফোন রেকর্ড ফাঁস পরবর্তী প্রতি মুহূর্তে রঙ বদলাচ্ছে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি।

গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে ৪৮ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর ক্যাম্পাসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে উপ-উপাচার্যের জামাতাকে নিয়োগদান, নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপ-উপাচার্যের অপসারণেরও দাবি উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মহলে।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমে আমার ফোনালাপ বিষয়ে যেসব সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে তা একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক আংশিক, খন্ডিতভাবে ও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি সামগ্রিক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ মনে করেন, তদন্ত করতে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেয়া হোক। এবং অধ্যাপক জাকারিয়া দোষী সাব্যস্থ হলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তারা।

উপ উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা বলছেন আন্দোলনকারীদের দাবি অযৌক্তিক। এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনকে আমি কখনই সমর্থন করি না। এটা নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও আন্দোলন করে তাহলে সেটা দু:খ জনক।

যে ইস্যু গুলো নিয়ে আন্দোলন করছে তারা, এগুলো কাদের সাথে সম্পর্কিত সেটা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। আর যে শিক্ষক গুলো আন্দোলন করছে তাদের পিছনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখতে হবে। তারা কোন পর্যায়ের দুর্নীতি করে এ পর্যায়ে এসেছে।’

নিয়োগ বাণিজ্য দুর্নীতিতে জড়িতের শাস্তির দাবি করে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্ণধার চৌধুরী জাকারিয়া দিব্যি নিয়োগ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। যার একটি মাত্র অডিও ফাঁস হয়েছে। তোমরা কতটাকা দিতে পারবা? এর মানে কি দাঁড়ায়? তিনি আরও বলেন, আমারা দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজ নিয়োগ বাণিজ্যর সঙ্গে জড়িতের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত পূজার ছুটির পর থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাব।

এদিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বিটিসি নিউজকে বলেন, উপ-উপাচার্যের অডিওর ব্যপারে উপাচার্যকে বলেছিলাম। এ বিষয়ে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কবে এ কমিটি গঠন করা হবে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানান নি।

অন্তর দাবি করে বলেন, প্রশাসন স্বীকার করেছে যে আইন বিভাগের ওই নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের করা হয়েছে। বিভাগের সভাপতি এ লেনদেনের সাথে জড়িত বলে বলা হয়েছে। যেই জড়িত হোক না কেন সকলকে ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন তাদের তদন্ত চালিয়ে যাক। আমরাও আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হান্নান বলেছেন, ‘ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমার এক জায়াগ থেকে টাকা এসেছিল ব্যাবসার জন্য। চাকরির জন্য কেউ আমাকে টাকা দেয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু শাহীন বলেন, ‘উপ-উপাচার্যের ফোনালাপের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে প্রশাসনের জবাবদিহিতার জায়গা নেই। তা না হলে প্রশাসনের এমন পর্যায়ে থেকে দুর্নীতি করা সম্ভব না। আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের যে একমুখীতা সেটা কতটুকু কার্যকর হবে বলতে পারছি না। তবে উপর মহলে যার নীতিনির্ধারন কারীরা আছে তাদের এ বিষয়টার উপর নজর দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।

এদিকে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নুরুল হুদার স্ত্রী ও নুরুল হুদা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুল্যেবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ আজ শুক্রবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়ার ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোন আলাপ থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যে নিমজ্জ্বিত।

বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক- কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনর যে জনরব চালু আছে এই ফোনালাপ তারই সত্যতা প্রকাশ করছে।’ তারা বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়ার সাম্প্রতিক বিবেকহীন আচরণ ও তাদের নিয়োগ বাণিজ্যের তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করবেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.