নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের সহায়তায় অ্যাসেট প্রজেক্টের ব্লক বাটিক ও স্কিন প্রিণ্টিংয়ের গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী আকতারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচ দিন অনুপস্থিত ছিলেন মুন্নী আকতার। কিন্তু অনুপস্থিতির ওই দিনগুলোতেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেন তিনি। আর এতে সহায়তা করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম।
মুন্নী আকতার অনুপস্থিত জানার পরেও তার সাক্ষরের স্থলে ‘অনুপস্থিত’ বিষয়ে কোনো শব্দ বা চিহৃ ব্যবহার না করে ফাঁকা রেখে দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরপিএল মোডে ফুড এণ্ড বেভারেজ সার্ভিস এল-টু এর অ্যাসেসমেণ্টে অংশ নিতে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন মুন্নী আকতার।
১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল এই তিনদিন দি অ্যাকাডেমি অব কলিনারীতে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ২০ এপ্রিল অ্যাসেসমেণ্টে (পরীক্ষা) অংশ নেন। অ্যাসেসমেণ্ট শেষে একই দিন নিজের ফেসবুক আইডিতে একাধিক ছবিসহ পোস্ট দেন মুন্নী আকতার। হাজিরা খাতা এবং এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্যসমূহ যাচাই ও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মুন্নী আকতার ঢাকায় অ্যাসেসমেণ্টে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেছিলেন।
এরপর অ্যাসেসমেণ্ট ও প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ২৩ এপ্রিল পুনরায় তিনি প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেন। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল মাত্র একদিন সরকারি ছুটি দেখানো আছে হাজিরা খাতায়। সে হিসেবে ১৭, ১৯, ২০, ২১ ও ২২ এপ্রিল অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনুপস্থিতির দিনগুলোতেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেন মুন্নী আকতার। এদিকে মুন্নী আকতার অনুপস্থিত জানার পরেও তার সাক্ষরের স্থলে ‘অনুপস্থিত’ বিষয়ে কোনো শব্দ বা চিহৃ ব্যবহার না করে ফাঁকা রেখে দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
ফলে মুন্নী ২৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আগের অনুপস্থিতির দিনগুলোতেও সাক্ষর করার সুযোগ পান। মুন্নী আকতার ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকবেন জেনেও তার সাক্ষরের স্থলে ‘অনুপস্থিত’ বিষয়ে কোনো শব্দ বা চিহৃ ব্যবহার না করে ফাঁকা রেখেই ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রিম সাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
পরে ২২ এপ্রিল মুন্নী অনুপস্থিত থাকলে সেদিনও তার সাক্ষরের জায়গাটি ফাঁকা রেখে সাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম। এ ধরণের জালিয়াতি ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সহায়তা ছাড়া এ ধরণের অপকর্ম করার সাহস কেউ পাবেন না। তিনি সহায়তা করেছেন বলেই একজন গেস্ট ট্রেইনার এ ধরণের অন্যায় কাজ করতে পেরেছেন। তারা আরো জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপসারিত ও পলাতক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী শাহিন আকতার রেনীর তদবিরে মুন্নী আকতারের চাকরি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে গেস্ট ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গেস্ট ট্রেইনার মুন্নী আকতার বলেন, আপনাদের এসব তথ্য কে দিয়েছে তার নাম বলেন? অনুপস্থিতির ওই দিনগুলোতেও হাজিরা খাতায় কেন সাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ছুটি নিয়েছি। কিন্তু ছুটির দিনগুলোতে সাক্ষর বেআইনির কিছু দেখি না।
তবে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতি ও ছুটির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে (তারিখসহ) কোনো তথ্য দিতে পারেননি মুন্নী। ছুটিতে থাকার কথা স্বীকার করলেও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.