নিজস্ব প্রতিবেদক: ধুমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসকদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা করেছে বাংলাদেশ ব্ল্রাইন্ড মিশন। শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এতে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন।
কর্মশালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (হু) দেয়া তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়, তামাকজাতদ্রব্য ও ধুমপানের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আর একই কারণে বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফ.এম শামীম আহম্মেদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রামেক হাসপাতালের ডেপুটি ডাইরেক্টর ডা: হাসানুল হাসিব।
বাংলাদেশ ব্ল্রাইন্ড মিশনের খন্দকার আবেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালা পরিচালনা এবং ফেসিলিটেশন করেন বিশিষ্ট কনসালটেন্ট শুভাশীষ চন্দ্র মহন্ত ও রোগতত্ত্ববিদ সামসুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন খন্দকার মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান ও বিবিএম’র তারেক মাহমুদ। এতে ২৫ জন চিকিৎসক অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্ল্রাইন্ড মিশনের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বলা হয়, তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্রতিকার পেতে বিভিন্ন ধরণের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য রোগীদের কাউন্সিলিং করা, উন্মুক্তস্থানে ধুমপান না করা, ধূমপান এবং তামাকদ্রব্য কেনা-বেচায় ও উৎপাদনে আইনের কঠোর প্রয়োগ, সন্তানদের/পরিবারের সদস্যদের সাথে ধুমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কাউন্সিলিং, ধুমপান ছাড়তে উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরস্কৃত করা, তামাক জাতীয় দ্রব্যের ওপর অধিকহারে করারোপ করা, মিডিয়ায় ধারাবাহিকভাবে তামাক এবং ধুমপান বিরোধী সংবাদ ও লেখা তুলে ধরা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
কর্মশালায় জানানো হয়, হু-এর তথ্য মতে, প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ২০২২ সালের এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ২৮.৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের হার ৪৭.৭ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ধূমপানের হার ৮.৭ শতাংশ। ধূমপানের কারণে মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে ধূমপানের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পুরুষদের মৃত্যু হার ২০.৮ শতাংশ এবং নারীদের মৃত্যু হার ০.৯ শতাংশ।
ধুমপান ছাড়তে/ক্ষতি কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর নির্দেশিকা বা গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১.২৫ বিলিয়ন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ তামাকের নেশা ছাড়তে চায়। আর ৭০ শতাংশ মানুষ এই বিষয়ে কোনো স্বাস্থ্য পরিষেবা বা অন্য সাহায্য পান না। হু-র এক চিকিৎসক বলেছেন, ধূমপান ত্যাগ করার সংগ্রাম অপরিসীম। আমাদের বুঝতে হবে যে এটা করতে শক্তি লাগে এবং এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে কষ্ট সহ্য করতে হয়।
আচরণগত সহায়তার সঙ্গে ওষুধের সংমিশ্রণ সফলভাবে ধূমপান ত্যাগ করার সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। ডব্লিউএইচও তামাক ছাড়ার কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে ভেরেনিক্লিন, নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এনআরটি), বুপ্রোপিয়ন এবং সাইটিসিনের মতো ওষুধের সুপারিশ করেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে নিকোটিন গাম এবং প্যাচ প্রথম হু-অনুমোদিত এনআরটি পণ্য হয়ে উঠে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত কাউন্সেলিং (৩০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট) এবং আরো নিবিড় আচরণগত সহায়তা যেমন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা ফোন কাউন্সেলিংয়ের সুপারিশ করেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.