রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল পেশাদার চক্র, গ্রেপ্তার-১৩

ক্রাইম (ঢাকা) রিপোর্টার: শিক্ষার্থীদের দিয়ে রাজধানীতে বাসা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে দস্যুতা ও ডাকাতি করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায় থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে ডাকাতি করানো হচ্ছে। চোর-ডাকাতদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এসব শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে।
ঢাকার নামিদামি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ১৩ ডাকাত। এদের মধ্যে আট জনই শিক্ষার্থী। এরা সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে আন্দোলন করেছে। বাকি তিন জন ডাকাতির পরিকল্পনাকারী এবং শিক্ষার্থীদের ব্যবহারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সফলতাকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে চুরি-ডাকাতির কাজে জড়িতরা এসব শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা নগরবাসীর অপরাধ তদন্ত করতে কখনই বাসাবাড়িতে প্রবেশ করবে না। তাই যখনই এরকম ঘটনা ঘটবে, ভুক্তভোগীদের নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।
গত বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ধানমন্ডির ১৩/এ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসায় অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাটের জন্য কয়েক জন প্রবেশ করে। তারা বাসায় প্রবেশ করেই ওই বাসার সিকিউরিটি গার্ডদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পথচারীদের সহায়তায় কয়েক জনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্য থেকে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি লোহার রড ও পাঁচটি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হাসিবুল হাসান, গোলাম মোরশেদ ও রুবেল হাওলাদার হলেন ডাকাত সিন্ডিকেটের মূল পরিকল্পনাকারী। এরা বিভিন্ন সময়ে রাজধানীতে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বাকিদের মধ্যে আজিজুল ইসলাম সরকারি তিতুমীর কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। জিহাদ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শেখ শাহরিয়ার আহমেদ গ্রিন রোডে অবস্থিত হামদর্দ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। মোস্তাফিজুর রহমান বেসরকারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, আবু সালেহ হিরন টঙ্গী সরকারি কলেজের এবং ইয়াসির আরাফাত মিরপুর বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়া ইব্রাহিম ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাকি মাহমুদুল হাসান শিমুল ও মাহফুজুর রহমান দুই জনই শিক্ষার্থী। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের নামপরিচয় পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
ধানমন্ডি থানার এসআই সাব্বির হায়দার শুভ গতকাল বিটিসি নিউজকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ডাকাতির পরিকল্পনাকারীরা পুলিশকে জানিয়েছে যে তারা সম্প্রতি সংঘটিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করলে চুরি বা ডাকাতির কাজটি খুবই সহজ হয়। এক্ষেত্রে ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া লুণ্ঠিত মালামালের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আট শিক্ষার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তারা কীভাবে এই ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ল—এ বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের অবগত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গুটি কয়েক বখে যাওয়া বা মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটি চক্র চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই কাজ চালাচ্ছে। সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়ার পর ঐ চক্রটি সুযোগটি নিচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীদের আর্থিক লোভ দেখিয়ে এই কাজটি করাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটিকে তারা ব্যবহার করছে। এই চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীদের অপরাধ মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
এই সমাজবিজ্ঞানী আরও বলেন, আমরা যারা নগরবাসী রয়েছি, তাদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীদের তো বাসাবাড়িতে ব্যক্তির অপরাধ তদন্ত করার কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের পরিস্থিতি দেখলেই নগরবাসী বা ভুক্তভোগীদের আশপাশের মানুষকে জানাতে হবে। জানাতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
ভুক্তভোগী অনেক নগরবাসী বলছেন, ৫ আগস্টের পর রাজধানীতে পুলিশের রাত্রিকালীন টহল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাত্রিকালীন টহল শুরু হয়। তবে এখনো পুলিশ আগের মতো রাত্রিকালীন টহল জোরদার করতে পারেনি।
তবে এ ব্যাপারে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, ধানমন্ডি থানা পুলিশের রাত্রিকালীন টহলরত একটি টিম ও সেনাবাহিনীর টহলরত একটি টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ক্রাইম (ঢাকা) রিপোর্টার স্বপন বালমেকী / ঢাকা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.