বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হুতি। ইয়েমেনের একটি বিরাট অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের হাতে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর থেকেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সমর্থন দিয়ে আসছে তারা।
সমর্থনের অংশ হিসেবে লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি যোদ্ধা ইরান সমর্থিত গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছে। এমনকি তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হুতির এক মুখপাত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে গ্রুপটি। এজন্য তারা বাব আল-মান্দেব প্রণালী দিয়ে চলাচল করা ইসরায়েল সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। বাব আল-মান্দেব প্রণালীটিকে লোহিত সাগরের প্রবেশপথ হিসেবে ধরা হয়। সুয়েজ খালে যেতে হলে এ প্রণালী দিয়ে যে কোনো জাহাজকে যেতে হবে।
ইয়েমেনে হুতিদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এজন্য দেশটিতে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। এ সুযোগে গ্রুপটি হাজার হাজার নতুন যোদ্ধাকে নিয়োগ দিতে পারছে।
বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নতুন যোদ্ধা নিয়োগের এই ঢেউ ইয়েমেনের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। এমনকি, দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধে থাকা ইয়েমেনের যুদ্ধবিরতির যে কোনো সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
আল-জাজিরা বলছে, লোহিত সাগরে শুধুমাত্র ইসরায়েল সম্পর্কিত জাহাজে নয়, মার্কিন জাহাজেও হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। এজন্য ইয়েমেনের নিজেদের অবস্থানকে ব্যবহার করছে তারা।
হুতিদের জন্য যুদ্ধবিরতির ভেস্তে যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের এমন মন্তব্য মানকে নারাজ গোষ্ঠীটির নেতারা। হুতি কর্মকর্তা নাসর আল-দিন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘একটি চুক্তি এখনও টেবিলে রয়েছে। শান্তির সুযোগ রয়েছে। ইহুদি, আমেরিকান ও ব্রিটিশ বাদে আমরা কাউকে আক্রমণ করতে চাই না। তাদের আক্রমণের মূল কারণ, তারা আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ কোনো গ্রুপ বা কাউকে হামলার কোনো উদ্দেশ্যে নেই আমাদের।’
হুতিদের নতুন যোদ্ধা
সানা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক আব্দুল ঘানি আল-ইরিয়ানি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ইয়েমেনিরা ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে অতি উৎসাহী। বিষয়টি হুতিদের সুবিধা করে দিচ্ছে।’ হুতি রাজনৈতিক ব্যুরোতে রয়েছে হুসাইন আলবুখাইতির এক ভাই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ আলবুখাইতি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইয়েমেনিরা এতোই অনুপ্রাণিত যে প্রতি এক ঘণ্টায় একজন করে হুতি বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে।’
আব্দুল ঘানি আল-ইরিয়ানির গবেষণা মতে, ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেড় লাখের মতো নতুন যোদ্ধ গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছে।
নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করেছে হুতিরা। এরপরেই নতুন যোদ্ধা নিয়োগে তোড়জোড় শুরু করে তারা। এর মধ্যে অনেক নতুন যোদ্ধা ইসরায়েল ও তাদের সমর্থন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজি। ১১ জানুয়ারির মধ্যে আন্তর্জাতিক শিপিং রুটের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র একটি জোট গঠন করে। সেই জোট হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের জোটের হামলার পর হুতিতে নতুন নিয়োগ ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে ধারণা অধিকাংশ বিশ্লেষকের। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ৩৭ হাজার জন গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ইয়েমেনি বিশেষজ্ঞ নিকোলাস জে বার্মফিল্ড বলেন, ‘লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণ ও মার্কিন বিমান হামলা নিঃসন্দেহে গ্রুপটিকে সমর্থন জোগাড়ে অনেক সাহায্য করেছে।’
নতুন যোদ্ধাদের মোতায়েন
২০২২ সালের এপ্রিলে ইরান সমর্থিত হুতিরা জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তবে, সেই যুদ্ধবিরতির পরে হুতি ও তাদের বিরোধীরা সংঘাতে জড়িয়েছে। কিন্তু, দুপক্ষ সংঘাত বন্ধে আলোচনার টেবিলেও বসেছে।
বিশ্লেষকদের শঙ্কা, যুদ্ধ নতুন করে শুরু হতে পারে। কারণ, নতুন নিয়োগে গ্রুপটি আগের থেকে বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ইতিমধ্যে ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যোদ্ধাদের মোতায়েন করছে হুতিরা।
বার্মফিল্ড বলেন, ‘যোদ্ধাদের মোতায়েন যদি কৌশল হয় তাহলে সেটি কীভাবে কাজ করবে তা স্পষ্ট নয়।’ আলবুখাইতি বলেন, ‘নতুন যোদ্ধা নিয়োগের প্রভাব গোটা অঞ্চলেই পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলসহ পশ্চিমাদেশগুলোর বিরুদ্ধে যে কেউ দাঁড়াতে পারে সেটি বুঝা যায়।’
নতুন যোদ্ধাদের মারিবে মোতায়েন করেছে হুতি। সেই এলাকাটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। যুদ্ধবিরতির আগে একাধিকবার এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া চেষ্টা করেছিল হুতিরা। আল-ইরিয়ানি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নতুন যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছে তারা। তবে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে হুতিরা। এতে স্পষ্ট হয়, তারা জেরুজালেমের দিকে যাচ্ছে না।’ #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.