যে ভাবে টানেলে ১৭ দিন আটকা ছিলেন ভারতের ৪১ শ্রমিক

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তরাখণ্ডের একটি ভূগর্ভস্থ টানেলে ১৭ দিন ধরে আটকে আছেন ৪১ জন শ্রমিক। তারা এখন উদ্ধারের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। শ্রমিকদের আর দুই মিটারেরও কম দূরত্ব খননের পরই উদ্ধার করা সম্ভব বলে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন (অব.) জানিয়েছেন।
কঠিন ভূখণ্ডের কারণে বেশ কিছু বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া উদ্ধার অভিযানটি এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধারের জন্য ভারতবাসী দু হাত তুলে প্রার্থনা করে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকরা এই টানেলে আটকে গেল কীভাবে?
সুড়ঙ্গ: সাড়ে ৪ কিলোমিটার টানেলটি ভারতের বিলাসবহুল চারধাম প্রকল্পের অংশ যার লক্ষ্য উত্তরাখণ্ডের চারটি বিশিষ্ট হিন্দু মন্দির— বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। সিল্কিয়ারা টানেল নামে পরিচিত এই টানেলটি উত্তরকাশী জেলার সিল্কিয়ারা ও দান্দলগাঁওকে সংযোগকারী রুটে অবস্থিত। এটি একটি ডাবল-লেনের টানেল ও চরধাম প্রকল্পের অধীনে সবচেয়ে দীর্ঘতম রুট।
সিল্কিয়ারা দিক থেকে প্রায় ২.৪ কিমি ও অন্য পাশ থেকে ১.৭৫ কিমি নির্মাণাধীন টানেল তৈরি করা হয়েছে। টানেলের কাজ শেষ হলে যাত্রাপথের সময় এক ঘন্টা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। টানেলটি নির্মাণের প্রকল্পটি পরিচালনা করছে হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও এ ধরনের প্রকল্পের কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
কী ভুল ছিল: ১২ নভেম্বর সিল্কিয়ারার দিক থেকে ২০৫ থেকে ২৬০ মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গের একটি অংশ ধসে পড়ে। যে শ্রমিকরা ২৬০-মিটার সীমানার বাইরে ছিলেন তারা আটকা পড়ে। সৌভাগ্যবশত টানেলের যে অংশে তারা আটকা পড়েছেন সেখানে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ রয়েছে। যদিও সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্তের পর ঠিক কী কারণে টানেল ধসে পড়েছে তা জানানো হবে। বর্তমানে একাধিক তত্ত্ব চারপাশে শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে একটি হল ভঙ্গুর হিমালয় অঞ্চলে ভূমিধসের ফলে এমনটি ঘটেছে। পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে এ ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প কীভাবে এর জন্য দায়ি তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামতও দিয়েছেন।
বড় ভুল: এমন দাবি করা হয়েছে যে সুড়ঙ্গটি নির্মাণকারীদের মাধ্যমেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল যার কারণে টানেল ধসে পড়েছে। উত্তরাখণ্ড ইউনিভার্সিটি অব হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রির পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এসপি সতি বলেছেন, ‘এজেন্সি কখনই এটা মেনে নেবে না, তবে আমি নিশ্চিত যে একটি বড় বিস্ফোরণ এই পতনের দিকে নিয়ে গেছে।’
এনডিটিভি এর আগে জানিয়েছিল, টানেলের নির্মাণ পরিকল্পনায় একটি এস্কেপ টানেলের (জরুরি পরিস্থিতিতে বের হওয়ার রাস্তা) কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এটি কখনও বানানোই হয়নি। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্সকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এস্কেপ টানেল না থাকায় এমনটা ঘটেছে কিনা? তিনি বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী এস্কেপ টানেলগুলো প্রকল্পের শেষের দিকে বানানো হয়। কারণ এ ধরনের প্রকল্প ধসে পড়বে সাধারণত কেউ সেই আশাই করেনা।
তবে তিনি বলেছেন, যদি কোনো এলাকায় নির্দিষ্ট ভূতাত্ত্বিক জটিলতা থাকে তবে সেখানে প্রকল্প চলাকালীনই এস্কেপ টানেল তৈরি করা হতে পারে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.