যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবারের জি-৭ সম্মেলন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতালিতে শুরু হয়েছে তিনদিনের জি-৭ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে ইউক্রেনকে সহায়তা, গাজায় যুদ্ধবিরতি, অভিবাসন নীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষা ও পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে একমত হতে পারেন জি-৭ নেতারা। এদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দকৃত সম্পদ ইউক্রেনকে দিতে সম্মত হতে পারে জি-৭। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব অনুসারে, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো প্রতিবছর ইউক্রেনের জন্য ৫ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সমর্থন দিতে জি-৭ মিত্রদের চাপ দেবেন।
এসব কারণে বেশ গুরুত্ব বহন করছে এবারের জি-৭ সম্মেলন।
প্রথমদিন সম্মেলনে যোগদানের আগেই এক্সবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আজ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
তিনি লিখেছেন, আজ আমি জি-৭ বৈঠকে যোগ দেব এবং বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করব। শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, কানাডা ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ঋষি সুনাক, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এবং আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও আমি দেখা করব।
এক্সবার্তায় জেলেনস্কি আরো জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিটি হবে নজিরবিহীন।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো সরকার চাইলে এ চুক্তি পরিবর্তন করতে পারবে। এ চুক্তির খসড়া অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ১০ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ, অস্ত্র উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
জি-৭-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো ‘গ্রুপ অব সেভেন’ বা সাতটি দেশের দল। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির সাতটি বড় দেশ ও একটি সংস্থা নিয়ে এই জোট গঠিত। জোটের সদস্যদেশ হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই জোটের একটি অংশ। রাশিয়া ১৯৯৭ সালে এই জোটে যোগ দিলে সেটা জি-৮ হয়েছিল। তবে ক্রিমিয়া দখল করার কারণে ২০১৪ সালে রাশিয়া বাদ পড়ে যায়। এরপর রাশিয়া আর জি-৭-এ যোগ দেয়নি। চীন একটি বড় অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা এই জোটের সদস্য নয়। কোনো দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে ওই দেশকে জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর মতো উন্নত অর্থনীতি হিসেবে দেখা হয় না। তবে চীন ও রাশিয়া জি-২০-এর সদস্য।
এবারে জি-৭-এর ৫০তম সম্মেলনে সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ছাড়াও আফ্রিকা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য হাজির হয়েছেন।
এ সম্মেলনে নিজ দেশের সমস্যার বাইরেও রাষ্ট্রপ্রধানরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পাবেন। প্রতিবছর জি-৭-এর একটি সদস্যদেশ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক এবং বছরব্যাপী সভাপতিত্বের জন্য দায়িত্ব নেয়। গত বছর ৪৯তম সম্মেলনের আয়োজক ছিল জাপান। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম আন্তর্জাতিক ফোরাম আয়োজন।
জি-৭-এর একটি জোট হলেও তারা কোনো আইন পাস করতে পারে না। কারণ প্রতিটি দেশেই নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে অতীতে এই জোটের অনেক সিদ্ধান্তের বৈশ্বিক প্রভাব দেখা গেছে। এর আগে ২০০২ সালে এইডস ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল জি-৭। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের জি-৭ সম্মেলন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য বেশি করের বিষয়ে মন্ত্রীরা একমত হন।
এবারের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল। এর বাইরে উপস্থিত হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.