মেসি-আলভারেসের গোলে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: শুরুর একাদশে ফিরেই জাল খুঁজে নিলেন হুলিয়ান আলভারেস। গত কয়েক ম্যাচের ব্যর্থতা ঝেরে সেমি-ফাইনালে এসে স্কোরশিটে নাম তুললেন লিওনেল মেসি। বাকি সময়ে এই ব্যবধান ধরে রাখল আর্জেন্টিনা। আপ্রাণ চেষ্টার পরও জালের দেখা পেল না কানাডা।
নিউ জার্সির মেট লাইফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে কানাডাকে ২-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে তারা জায়গা করে নেয় ফাইনালে। শেষ চারেই থামে প্রথমবার কোপা আমেরিকা খেলতে আসা কানাডার স্বপ্নময় যাত্রা।
টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেদিনও ২-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। তিন ম্যাচ পর একই দলের কাছে একই ব্যবধানে হারল কানাডা।
কোপা আমেরিকার ইতিহাসের রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার এটি ৩০তম ফাইনাল। সবশেষ আট আসরের ৬টিতেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নাম লেখাল তারা। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে উরুগুয়ে বা কলম্বিয়া।
ম্যাচের ২৩তম মিনিটে প্রথম গোল করেন আলভারেস। পরে ৫১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি।
আর্জেন্টিনাকে ছেড়ে কথা বলেনি কানাডা। বল দখলের লড়াইয়ে দুই দল ছিল কাছাকাছি। শিরোপাধারীদের ১১ শটের বিপরীতে কানাডা গোলের জন্য করে ৯টি শট। অবশ্য এর মাত্র ২টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। আর লক্ষ্য বরাবর ৩ শটের দুটিতে জাল খুঁজে নেয় আর্জেন্টিনা।
গতিময় ফুটবলে শুরুতে আর্জেন্টিনাকে বেশ চাপে রাখে কানাডা। আনহেল দি মারিয়া ও আলভারেসকে শুরুর একাদশে ফেরানো আর্জেন্টিনা ভুগছিল তাল মেলাতে।
প্রথম সুযোগ পায় কানাডাই। পঞ্চম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে বাম পাশ থেকে নেওয়া জ্যাকব শ্যাফলবার্গের শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। দুই মিনিট পর দ্রুত গতির আক্রমণে প্রায় একই জায়গায় বল পান শ্যাফলবার্গ। এবার তার গড়ানো শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
দ্বাদশ মিনিটে নিজেদের প্রথম বড় সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। ডান পাশ থেকে দি মারিয়ার পাসে বল পেয়ে যান মেসি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার বাম পায়ের শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে!
কানাডার দুটি ব‍্যর্থ প্রতি আক্রমণের পর ২৩তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে রদ্রিগো দে পলের থ্রু বল দারুণ প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেন আলভারেস। চ‍্যালেঞ্জ জানাতে আসা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে তিনি খুঁজে নেন জালের ঠিকানা।
চলতি কোপা আমেরিকায় দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে আলভারেসের এটি নবম গোল।
বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে গোল করা আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে চতুর্থ ফুটবলার আলভারেস। ২০২২ বিশ্বকাপেও শেষ চারে গোল করেছিলেন তিনি। এর আগে ২০০৭ ও ২০১৬ কোপা এবং ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গোল করেন মেসি। অন‍্য দুই জন ব্রাজিলের রোমারিও ও উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলান।
২৬তম মিনিটে বাম পাশে ফ্রি-কিক পায় কানাডা। আলফুঁস ডেভিসের বাম পায়ের ক্রসে হেড করতে পারেনি কেউ।
৩৪তম মিনিটে ডান পাশ থেকে বারের ওপর দিয়ে মারেন দি মারিয়া। পরের মিনিটে মেসির পাসে তাগলিয়াফিকোর শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাইরে চলে যায়। পরে সেই কর্নার থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লিসান্দ্রো মার্তিনেস।
১০ মিনিট পর আরেকটি সুযোগ পান মেসি। ডান পাশ থেকে দি মারিয়ার পাসে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শট নেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। এবারও অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে চলে যায় বল।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডি-বক্সের মুখে অনেকটা ফাঁকায় পান মেসি। কিন্তু তার চিপ শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে জন্সটনের থ্রো-ইন থেকে আচমকা শট নেন ডেভিড। কাছ থেকে ঠকিয়ে দেন তৎপর আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা কমে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার। তবে প্রথম জোরাল আক্রমণেই জাল খুঁজে নেয় তারা। জটলা থেকে বল ক্লিয়ার করার চেষ্টায় ডি-বক্সের মুখে এনসো ফের্নান্দেসকে দিয়ে দেন কানাডার এক ডিফেন্ডার। চেলসি মিডফিল্ডারের তীব্র গতির শটে খুব কাছ থেকে বাম পা ছুঁয়ে একটু দিক পাল্টে জালে পাঠান মেসি।
চলতি কোপা আমেরিকায় এটিই আর্জেন্টিনা অধিনায়কের প্রথম গোল। সবমিলিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে চতুর্দশ। এনিয়ে কোপা আমেরিকার ভিন্ন ছয় আসরে জালের দেখা পেলেন আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ১০৯ গোলের মালিক।
৬১তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল আলভারেসের সামনে। দি মারিয়ার থ্রু বল ডি-বক্সের কাছে ফাঁকায় পেয়ে যান তরুণ ফরোয়ার্ড। কিন্তু তিনি শট নেন একদম গোলরক্ষক ম্যাক্সিম ক্রেপু বরাবর।
পরের মিনিটে আক্রমণে ওঠে কানাডা। আলি আহমেদের পাস থেকে পাওয়া বল বারের ওপর দিয়ে মারেন ইসমাইল কোনে। ৭৫তম মিনিটে ফের আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভীতি জাগায় তারা। তবে জটলার মধ্যে সুবিধা করতে পারেনি অতিথি দলটি।
শেষ দশ মিনিট উজ্জীবিত ফুটবল খেলে গোলের জন্য মরিয়া কানাডা। ৮৯তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে তানি ওলুয়াসেইর পায়ের শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকান এমিলিয়ানো। পরের মিনিটে অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায় তানির হেড।
জাল অক্ষত রেখে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতে আর্জেন্টিনা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.