মাটিখেকোদের দৌরাত্ম থামছেই না, বড়াইগ্রামে অবাধে নদী খননের মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম কিছুতেই থামছে না। একটি প্রভাবশালী চক্র সরকারীভাবে খনন করা নদীর মাটি অবাধে বিক্রি করে চলেছে।
ইতিপূর্বে প্রশাসনের বাধায় নদীর মাটি বিক্রি বন্ধ হলেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় তারা মহাসমারোহে মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেছে। এভাবে নদীর মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মাটি বিক্রেতাদের দাবী, জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তারা এ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বড়াল নদী খনন করা হয়। সে সময় নটাবাড়িয়া এলাকায় নদীর দুই পাড়সহ পাশর্^বর্তী ব্যক্তি মালিকানা জমি মিলিয়ে প্রায় ২০ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উঁচু করে খননের মাটিগুলো রাখা হয়।
এরপর জমির মালিকরা উঁচু মাটির উপরেই কলাবাগানসহ বিভিন্ন গাছপালা রোপণ করেন। নিয়মানুযায়ী এসব মাটি কোন ব্যক্তি বিক্রির সুযোগ না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নটাবাড়িয়া গ্রামের রানা, নদজোয়াড়ী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, গুণাইহাটি গ্রামের ওয়াজেদ আলী ও মহিষভাঙ্গা চকপাড়া এলাকার রেজাউল করিমসহ অন্যান্যরা বড়াল নদী খননের মাটি অবৈধভাবে এসব মাটি গাড়ি প্রতি ১০০০-১৩০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।
প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত দুটি এক্সকেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে এসব মাটি কেটে প্রায় ২০টি ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি রাতে কমপক্ষে ২০০-২২৫ গাড়ি মাটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে মাটি বিক্রি করে এ চক্রটি একদিনে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী বিটিসি নিউজ সহ কয়েকটি সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসন সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা পুনরায় আগের মত মাটি কেটে বিক্রি করা শুরু করেছে। মাটি বোঝাই শত শত ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে। সারারাত ভেকু ও ট্রাক্টরের চলাচলের শব্দে স্থানীয়দের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মাটি কাটার আগে তারা স্থানীয় কৃষকদের রোপণ করা ফলবান কলাগাছসহ অন্যান্য গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফেলায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় দুটি এক্সকেভেটর মেশিন দাঁড় করানো। অন্ধকার নেমে এলেই তারা মাটি কাটা শুরু করবেন। ইতিমধ্যে মাটিখেকোরা বড়াল নদীর ব্রিজ থেকে জোয়াড়ী বাজারের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ সময় সেখানে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েই আমরা মাটি বিক্রি করছি। তবে নদী খননের মাটি বিক্রি করার এখতিয়ার উনাদের আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
নটাবাড়িয়া গ্রামের আবু রাসেল ও আব্দুল মালেক বিটিসি নিউজকে জানান, আমরা প্রতি গাড়ি মাটি ১৩শ’ টাকা দরে কিনে নিয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বাড়ির পাশেই নদী, অথচ এ মাটি আমাদেরকে নগদ টাকায় কিনে নিতে হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে মাটি বিক্রির কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা এরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গৃহিণী বিটিসি নিউজকে জানান, আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলে। এসব ট্রাক্টরের শব্দে আমরাও ঘুমাতে পারছি না, বাচ্চারাও ঘুমাতে পারছে না।
মাটি কাটার দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, ডিসি-ইউএনও, ওসি সবার পারমিশন নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানে।
ইউএনও আবু রাসেল (০১৭৬২৬৯২১০৯) জানান, নতুনভাবে মাটি বিক্রি শুরু করার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.