বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমার থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বেড়েই চলেছে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের কারণে পূর্ব মণিপুরের কামজং জেলায় এ পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ১ হাজার ৬৫০ নাগরিক প্রবেশ করেছে বলে মণিপুর সরকারের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। শরণার্থীদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জেলার বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক অধস্তন সদস্য আজ বৃহস্পতিবার বলেন, প্রধানত মিয়ানমারের সাগাইং প্রদেশের তামু শহর থেকে মণিপুরের অর্ধে মোরেতে শরণার্থীরা ঢুকছে। এ পর্যন্ত মিয়ানমারের নাগরিকদের আসা বন্ধ করা যায়নি। এতে রাজ্যে কিছু নতুন সমস্যা হচ্ছে।
ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশের ফলে মিয়ানমারের অবৈধ নাগরিকদের ‘বায়োমেট্রিক’ তথ্য–উপাত্ত তৈরি করার কাজ অনেকটাই ধীরে হচ্ছে। এর সঙ্গে শীত মৌসুমের বৃষ্টি গতি আরও কমিয়ে দিয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আসা মানুষের ‘বায়োমেট্রিক’ তথ্য–উপাত্ত তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের চিহ্নিত করে নিজ দেশে ফেরাতে কোনো অসুবিধা না হয়।
মিয়ানমার থেকে কামজং জেলায় আসা মোট ১ হাজার ৬৩৭ শরণার্থীর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯২ জনের ‘বায়োমেট্রিক’ করা হয়েছে। মিয়ানমারের শরণার্থীরা বর্তমানে হুমিন, ফাইকোহ, নামলি, ওয়াংলি ও কাকার মতো গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সদস্যরাও মিজোরাম দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। গত সপ্তাহের গোড়ায় সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ১০৪ সদস্য ভারতে প্রবেশ করেছিল। মিজোরাম দিয়ে ইতিমধ্যে আরও কয়েক হাজার সাধারণ শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করেছে।
মণিপুরের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ, সেখানে সাত মাস ধরে জাতিগত সহিংসতার কারণে প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে চলতি সপ্তাহের গোড়ায় মারা গেছে ১৩ জন। হাজার হাজার মানুষ এখনো গৃহহীন।
মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের অভিযোগ, মিয়ানমার থেকে আসা কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর মানুষ মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চলের দখল নিচ্ছে, বসবাস করছে, কখনো-সখনো আফিমের চাষ করছে এবং যথেচ্ছভাবে মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে।
মণিপুরের আদিবাসী কুকি-চীন ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রভাবশালী, মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চল তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা নাগরিকেরা মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চলের জায়গাজমি কিনে বসবাস করছে। ফলে বাস্তুজমি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মেইতেইদের।
পার্বত্য অঞ্চল সংখ্যালঘু আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। তাই সেখানে জমি কিনতে পারে না সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা। মেইতেইদের বড় অংশকে আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
মেইতেইরা অভিযোগ করে, কামজংসহ অন্যান্য জেলায় আদিবাসীর সংখ্যা অনুপ্রবেশের কারণে বেড়ে গেলে ভবিষ্যতে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হবে। কিন্তু কীভাবে এই অনুপ্রবেশ আটকানো যাবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা এখন পর্যন্ত রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। এ অবস্থায় বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লাগাতার অনুপ্রবেশের ফলে সেই কাজ অনেকটা স্তিমিত। সরকারি অফিসাররা বলছেন সে কথা। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.