বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টানা বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদ-নদীর জলস্তর বৃদ্ধি, মাটিধস ও ঘরবাড়ি ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েক লাখো মানুষ। বন্যায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য আসাম। সেখানে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী রোববার পর্যন্ত আসামে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের ১২টি জেলায় কয়েক লাখ মানুষ বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। জুনের ৩ তারিখ থেকে ভোটের দিন ৭ জুন পর্যন্ত কয়েকটি নদীতে পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে ছিল। তবে বর্তমানে কিছু জায়গায় পানি কমলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
আসামের পশ্চিমাঞ্চলের ধুবড়ি এবং দক্ষিণাঞ্চলের হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ অংশ এখনো প্লাবিত। কোপিলি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আসামের শ্রীভূমি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানে প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাছাড়ে ৫৭ হাজার ও হাইলাকান্দিতে ৭৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ১৩৩টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ। ধান, সবজি ও অন্যান্য চাষের জমি ডুবে যাওয়ায় কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আজ ব্রহ্মপুত্র নদের কিছু এলাকায় পানি বিপৎসীমার নিচে নামায় ছোট ও মাঝারি নৌকা চলতে শুরু করেছে। এতে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে কিছুটা গতি এসেছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
অরুণাচলে ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১২ জনের। রাজ্যের ২৪টি জেলায় ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুবনসিরি নদীর দুই পারের জেলায় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। প্রায় ৫০০ গ্রামের বাসিন্দারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
মেঘালয়ে ১০টি জেলায় অন্তত ৯০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মিজোরামে ধারাবাহিক ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার। কিছু গ্রাম এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ভূমিধসে নিহত হয়েছেন ভারতে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের তিনজন শরণার্থীও।
নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা ও সিকিমেও বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কোথাও পানি কিছুটা কমেছে, তবে কিছু অঞ্চলে তা আবার বাড়ছে। এখন পর্যন্ত মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে মৃত্যু হয়েছে আটজনের।
আসামের বিখ্যাত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের কিছু অংশ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, পানি নামার পর বন্য প্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর কর্তৃপক্ষ কিছু গন্ডারকে উঁচু স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এবারের পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.