ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চৌকস পুলিশ কর্মকতা আলমগীর হলেন ট্যুরিস্ট পুলিশে ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে সিদ্ধহস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি: ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। পথে কয়েকজনকে টুপি পরে এলোমেলো ভাবে রাস্তায় হাঁটতে দেখে তার সন্দেহ হয়। তিনি জানতে চান তারা কোথা থেকে ফিরছেন। পথচারিরা জানায় তারা ফিরছেন একটি জানাজা থেকে। কিন্তু উত্তর শুনে সন্দেহ দূর হয় না। গাড়ি থেকে নেমে পথচারিদের দেহ তল্লাশি করেন তিনি। এই সময় একজনের কোমরে পাওয়া যায় বিদেশী পিস্তল। তৎক্ষনাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে আসামীদের নিয়ে অফিসে চলে আসেন তিনি। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের আদ্যপান্ত।
এভাবেই গোয়েন্দা কাহিনীকে হার মানানো অসংখ্য অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন। দ্রুততম সময়ে একাধিক ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হওয়ায় পুলিশ বাহিনীতে এই কর্মকর্তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
চৌকস এই কর্মকর্তা বিসিএস ২৫ ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে পুলিশ সুপার হয়েছেন তিনি। তার বর্তমান কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বদলি জনিত কারণে তার নতুন কর্মস্থল হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, যখনই কোনো ক্লুলেস হত্যাকান্ড ঘটে তখনই মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ঘটনার আদ্যপান্ত নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু করে দেন তিনি। দ্রুত তম সময়ে সফলও হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় তিনি এই ধরনের অন্তত ১৫/২০টি ক্লুলেস মামলার রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-শিশু হালিমা হত্যা রহস্য। মাকে আপন চাচার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চাচার হাতে খুন হয়ে ছিল শিশু হালিমা খাতুন। সদর উপজেলার ভাদুঘর এলাকায় ২ ফেব্রুয়ারি এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ছিল। দুই মাস আগে ছোট্ট শিশু হালিমার মা খাদিজা বেগমকে কুপ্রস্তাব দেয় তারই বখাটে দেবর হেলাল মিয়া।
এই কু-প্রস্তাবে রাজি না হয়ে খাদিজা তার পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানান। এতেই প্রতিশোধ নিতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তিনি শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আপন ভাতিজি শিশু হালিমা খাতুনকে।
এছাড়া পরকীয়ার জেরে গত ১৪ মার্চ খুন হন নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা গ্রামের ডেকোরেটর কর্মী জুয়েল মিয়া। দ্রুত সময়ে জুয়েল মিয়ার খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন আলমগীর হোসেন। তুচ্ছ কারণে হত্যাকান্ডের শিকার পরিবহন শ্রমিক সুবরের খুনিদের খুঁেজ বের করতেও তার বেশি সময় লাগেনি। লুডু খেলার টাকা নিয়ে বন্ধুদের হাতে খুন হন সবুর।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি পুলিশ সদর দফতর থেকে মনিটরিং করা হয়। ২৯ জুন রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয় মোহাম্মদ আলীর। পুলিশ তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পাট ক্ষেত থেকে।
পোশাক, মোবাইল ফোন এবং মোবাইলের মেমোরিতে থাকা ছবি ও মৃত দেহের আকৃতি দেখে লাশ সনাক্ত করেন তার স্ত্রী ফাতেমা। যথারীতি ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডেরও রহস্য উন্মোচনে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।
এছাড়া সিএনজি চালক হাবিজ মিয়া হত্যা রহস্য, শ্রমিক শহিদ মিয়া হত্যা মামলাসহ, ভিকটিমের মোবাইল ফোনে নিজের সিমকার্ড ঢুকিয়ে মাত্র ৩০ সেকেন্ড কথা বলার সূত্র ধরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে খুনি রানা। সে হাটহাজারী মাদ্রসার ছাত্র আকবর হত্যা কান্ডের প্রধান আসামী। এই ঘটনাও রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়ে ছিলেন আলমগীর হোসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের ২নং ফাঁড়ি পুলিশ পরিদর্শক সোহাগ রানা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ক্লুলেস হত্যাকান্ডে রহস্য উন্মোচনে আলমগীর স্যারের জুড়ি নেই। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব।
নতুন কর্মস্থলে যোগদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ক্ললেসসহ যে কোনো হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন সবসময় আমায় উৎসাহ জোগায়। তবে পুলিশ বাহিনীতে প্রত্যেকটি কর্মস্থলই গুরুত্বপূণ। পেশাদারিত্ব বজায় রাখলে সব জায়গা থেকেই দেশের জন্য কাজ করা যায়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.