বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ শনিবার সকাল নয়টা ৩৫ মিনিটে ঢাকাসহ সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সামনে আসেনি। গত দুই দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের এসব ঘটনা তুলে ধরা হলো-
আফগানিস্তান: চলতি বছর ৭, ১১ ও ১৫ অক্টোবর আফগানিস্তানে তিন দফা ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এতে ১ হাজার ৪৮২ জনের প্রাণহানি, ২ হাজার ১০০ জন আহত হন। ৭ অক্টোবর দেশটির হেরাত প্রদেশে প্রথম দফা ভূমিকম্প হয়। এরপর ১১ ও ১৫ অক্টোবর ৬ দশমিক ৩ মাত্রার আরও দুই দফা ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে দেশটির পাশাপাশি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৪০০ লোকের মৃত্যু হয়।
তুরস্ক: চলতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক-সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। দেশটির স্থানীয় সময় রাত চারটা ১৭ মিনিটে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৫৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৮৩ ও সিরিয়ায় ৮ হাজার ৪৭৬ জনের মৃত্যু হয়।
তুরস্কের ভূমিকম্পে ১ লাখ ৭ হাজার ২০৪ ও সিরিয়ায় সাড়ে ১৪ হাজার লোক আহত হন। সর্বমোট আহত হন ১ লাখ ২১ হাজার ৭০৪ জন। ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই ২৯৭ জন নিখোঁজ হন। উল্লেখ্য, তুরস্ক-সিরিয়ায় সংঘটিত ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং ভূ-কম্পন বিন্দু ছিল ৩৭ হাজার ১৬৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা থেকে ৩৭ হাজার ০৩২ পূর্ব অক্ষরেখা পর্যন্ত।
এর আগে ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৬ শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়।
হাইতি: হাইতির দক্ষিণাঞ্চলে ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ২ হাজার ২ শতাধিক লোকের প্রাণহানি ও প্রায় ১৩ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
এছাড়া, ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশটির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার লোকের প্রাণহানি হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এই ভূমিকম্পের কারণে শহরটি ও আশেপাশের এলাকার ৮০ হাজার ভবন বিধ্বস্ত হয়।
ইন্দোনেশিয়া: ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে ১ দশমিক ৫ মিটার সুনামি হয় ও ৪ হাজার ৩ শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রায় ৯ দশমিক ১৫ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে সুনামি হয়। যা ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কায় ও এ অঞ্চলের আরও একাধিক দেশে আঘাত হানে। এতে অনেক গ্রাম ও পর্যটন দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যায় এবং প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার নিহত বা নিখোঁজ হন।
ইরান: ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় কেরমানশাহ অঞ্চলে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪ শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়। এতে প্রতিবেশী দেশ ইরাকে অন্তত ৬ জন নিহত হন।
মেক্সিকো: ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৩৬৯ জনের প্রাণহানি হয়। ১৯৮৫ সালের ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ইতালি{ ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ইতালির মধ্যাঞ্চলীয় রোমের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ লোক নিহত হন।
ইকুয়েডর: ইকুয়েডরে ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে সাড়ে ৬ শতাধিক লোক নিহত হন।
নেপাল: নেপালে ৭ দশমিক ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার লোকের প্রাণহানি হয়। ওই ভূমিকম্পে ৮০ লক্ষাধিক লোকের জীবন বিপর্যস্ত হয়।
চীন: চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ইউনান প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্তত ৬০০ লোক নিহত হন। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট এ ভূমিকম্প ঘটে।
২০০৮ সালের ১২ মে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ৮৭ হাজার ৬০০ লোকের প্রাণহানি হয়।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ৭ দশমিক ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৭ ও ৬ দশমিক ৮ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে অন্তত ৮২৫ জনের প্রাণহানি হয়।
২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৭৩ হাজার লোক নিহত হন। এর প্রভাবে কাশ্মীরেও ১ হাজার ২৪৪ জনের মৃত্যু হয়।
ইরান: ২০১২ সালের ১১ আগস্ট ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবরিজ শহরের কাছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪ ও ৬ দশমিক ৩ মাত্রার দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।
২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব কেরমান প্রদেশে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং বাম শহরকে সমতল করে দেয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।
জাপান: জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০১১ সালের ১১ মার্চ ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ১৫ হাজার ৬৯০ জন নিহত ও ৫ হাজার ৭০০ জন আহতের ঘটনা ঘটে। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ও ঘটে এই ভূমিকম্পে।
নিউজিল্যান্ড: ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১৮০ জন নিহত হন।
চিলি: চিলিতে ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ও পরবর্তী সুনামির ফলে ৫ শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়। লাখ লাখ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয় এবং মহাসড়ক ও সেতু ভেঙে যায়। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.