বিদ্যুৎ বিলে স্ট্যাম্প ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

 

খুলনা ব্যুরোগ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল ৪শ’ টাকার বেশি হলে প্রতিটি বিলেই ১০ টাকা মূল্যমানের রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে। বিল পরিশোধের পর নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগিয়েই বিলের কপি গ্রাহককে সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সোনালি ব্যাংক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা শাখায় ঘটেছে অনিয়ম-দুর্নীতির নয়া কৌশল।

এ শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) তাপষ দাস তার অধিনস্তদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিলে স্ট্যাম্প না লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত তিন মাসে গ্রাহকদের বিলকপি পর্যবেক্ষণে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকেগ্রাহক কপিতে রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো না হলেও স্ট্যাম্প বাবদ বিলপ্রতি ১০ টাকা হারে মোটা অংকের অর্থ কর্তন করা হচ্ছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ অফিসে দাখিলকৃত স্টেটমেন্টে যার প্রমাণ মিলেছে। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাবদ অর্থ কেটে রাখলেও সরকারি কোষাগারে সে রাজস্ব জমা হচ্ছে না। গ্রাহকের বিলের বিপরীতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করে তা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে সোনালি ব্যাংক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা শাখায় ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) তাপষ দাস বিটিসি নিউজকে বলেনকাউন্টার থেকে ভুল করেছে। বিলগুলো পেলে রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেওয়া হবে। তবেপ্রতি মাসে টাকা কর্তনের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছেওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ওজোপাডিকোর আওতাধীন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে হাজিগ্রাম ফিডারে ৪ হাজারদেয়াড়া ফিডারে ৮ হাজার এবং কেআইটিসি ফিডারে আরও ৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যহার করে থাকেন। এ গ্রাহকরা প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল সোনালি ব্যাংক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা শাখায় জমা দেন।

কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকলেও হঠাৎ করে আগস্ট মাসে ৪শ’ টাকার উর্দ্ধে পরিশোধকৃত বিদ্যুৎ বিলগুলোর গ্রাহক কপিতে কোনো ধরণের রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহার করেননি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনেক বিলেই শুধুমাত্র সিল থাকলেও সংশ্লিষ্ট ক্যাশ কর্মকর্তার স্বাক্ষর পর্যন্ত নেই। প্রথমে গ্রাহকরা বিষয়টির প্রতি লক্ষ না করলেও প্রতি মাসেই একই ধরণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

সূত্র জানায়সোনালি ব্যাংক দিঘলিয়া উপজেলা শাখার ম্যানেজার  তাপষ দাস ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য নাজমুল হাসানএনামুল হাসানবেল্লাল হোসেন ও ফেরদাউস রহমানকে দিয়ে বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করিয়ে থাকেন। আনসার সদস্যরা গ্রাহকের বিল সহকারি ক্যাশিয়ার তোফায়েল আহমেদকে বুঝিয়ে দেন। আর এর ফাঁকেই করা হয় স্ট্যাম্প ফাঁকির ঘটনা।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন আনসার সদস্য নাজমুল হাসান।

উপজেলার দেয়াড়া এলাকার গ্রাহক সোহেল পারভেজ জানান২৫ অক্টোবর তিনি ২ হাজার ৯০৯ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। নিয়ম অনুযায়ী তার বিলের ১০ টাকা মূল্যের রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানোর কথা। কিন্তু ব্যাংক থেকে স্ট্যাম্প ছাড়াই তাকে বিলের কপি ধরিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে আব্দুল জালাল শেখবাবুল শেখঅলোকা বেগমআজিজুর মোল্লালোকমান খাঁআক্কাছ দফাদাররবিউল হাওলাদারসহ অধিকাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রেই নেওয়া হয়েছে এ ধরণের দুর্নীতির আশ্রয়। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ওজোপাডিকোর আঞ্চলিক হিসাব দপ্তরের সূত্র জানানআগস্টসেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এ তিন মাসে সোনালি ব্যাংক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা শাখায় ১০ টাকা মূল্যের রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার ৫১০ টাকা কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে ৬১ হাজার ৫শ’, সেপ্টেম্বরে ৫৬ হাজার ১৯০ এবং অক্টোবরে ৬২ হাজার ৮২০ টাকা কর্তন করা হয়। ব্যাংক ম্যানেজার প্রতি মাসের দেওয়া প্রতিবেদনে এ হিসাব দাখিল করেছেন।

ওজোপাডিকোর আঞ্চলিক হিসাব দপ্তরের ব্যবস্থাপক (হিসাব) তপন কুমার দত্ত এ প্রতিবেদককে বলেনবিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে বিধি অনুযায়ী রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো বাধ্যতামূলক। সেজন্য স্ট্যাম্প বাবদ টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু সে টাকা রাজস্ব খাতে জমা না করে আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে সোনালি ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শহীদুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেনবিলের পরিমাণ ৪০১ টাকা বা তার বেশি হলেই রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)র নির্দেশনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন ধরণের অনিয়ম বা দুর্নীতি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.