নিজস্ব প্রতিবেদক: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কৃষকেরা।
বুধবার বিকেলে বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এই অবসর আদেশকে অবৈধ দাবি করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানান। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি “বিএমডিএ’র সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপকারভোগী কৃষক” ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৫ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান একটি অফিস আদেশে জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন। তবে কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আওয়ামী সরকারের সমর্থকদের ষড়যন্ত্রের ফলেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারা মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম খান দীর্ঘদিন ধরে বিএমডিএ’র সেচ শাখার প্রধান হিসেবে কৃষিখাতে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন, বিশেষ করে তার নেতৃত্বে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল।
বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসর দেওয়া সরকারের পরিকল্পিত একটি পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে সংগঠনের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং কৃষি মন্ত্রণালয় তার ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ”এক মাস আগে ওই পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি তখনও বিএমডিএতেই ছিলেন। বদলির আদেশ পরেও যদি কেউ পদে থেকে পরিবর্তন না আনেন, তাহলে প্রশ্ন ওঠে তার উদ্দেশ্য নিয়ে। আমাদের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হতো, কিন্তু তা না করে রাতের অন্ধকারে জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসর দেওয়া হয়েছে, যা আমরা মেনে নেব না।”
বিএমডিএ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান আরো বলেন, “যেভাবে শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছিল এবং জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসর দেওয়ার পেছনে যেভাবে কার্যক্রম চলে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের দ্বারা এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।”
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট থেকে আসা কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম খান স্যারকে আমি ২০০৮ সাল থেকে চিনি, তিনি সেচ শাখাকে ঢেলে সাজিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে কৃষিখাতে বিপ্লব হয়েছে। তার অবসর আদেশ আমাদের মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যদি তার অবসর আদেশ প্রত্যাহার না হয়, তাহলে ১৮ হাজার গভীর নলকূপে অচলাবস্থা তৈরি হবে, যার ফলে আবাদ থেমে যাবে। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়কেই দায় নিতে হবে।”
এ মানববন্ধনে শতাধিক কৃষক এবং বিএমডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। তারা দৃঢ়ভাবে দাবি জানান, অবিলম্বে জাহাঙ্গীর আলম খানকে তার পদে বহাল রাখতে হবে, নতুবা সেচ সিস্টেমে বিশাল সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের কৃষি উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিএমডিএর কর্মকর্তারা এবং কৃষকরা জাহাঙ্গীর আলম খানকে স্বপদে বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছেন, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, তার নেতৃত্বে কৃষিখাত এবং সেচ ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ উঠছে যে, এই পদক্ষেপটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলস্বরূপ এবং কৃষিখাতের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের কৃষি খাতের ভবিষ্যত এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ওপর এটি একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.