বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ সান্তাহারে!
মো. রবিউল ইসলাম (রবীন): বিষয়টি শুনতেই অবাক লাগতে পারে, তারপরও বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরের তারাপুর গ্রামের অবস্থিত মসজিদটিই দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ হিসেবে দাবি করছেন এলাকাবাসী।
মসজিদটির ভেতরে মাত্র তিনজন মানুষের নামাজ আদায় করার মতো জায়গা আছে। ছোট এ মসজিদটির ওপরে একটি গুম্বুজও রয়েছে। রয়েছে একটি ধ্বসে পড়া মিনারের ধ্বংসাবশেষ।
প্রাচীন এই মসজিদ সম্পর্কে এই এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ,বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বহু আগের নির্মিত এই মসজিদটি অযন্ত্র আর অবহেলায় পড়ে আছে, যে কোন মুহুর্তে এটি ধসে পড়তে পারে। এলাকাবাসীর দাবি, এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এরচেয়ে ছোট মসজিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়নি। সরকারিভাবে এটি সংরক্ষণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞগন মন্ত্রব্য করেছেন।
সরজমিনে মসজিদটি মেপে দেখা গেছে, নামহীন এই মসজিদটির উচ্চতা ১৫ ফুট আর প্রস্থ ৮ ফুট,দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। একজন মানুষ অনায়াসে সেখানে ঢুকতে বা বের হতে পারে। একটি গম্বুজ আছে, যেটি অনেকটাই উঁচুতে। মসজিদটির মিহরাব এতই ক্ষুদ্র যা ভেতরে না গেলে গেলে চোখেই পরে না। মসজিদটির দরজার উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট এবং প্রসস্ত আড়াই ফুট। সবোর্চ্চ তিন জন মানুষ এখানে নামাজ পড়ার উপযোগী। মসজিদটির দরজায় দুটি সুন্দর খিলান আছে ভেতরে আছে মিম্বর ও মেহরাবই বলে দেয়,এটি একটি ছোট মসজিদ। এই জাতীয় আরেকটি ছোট মসজিদ রয়েছে সান্তাহার পৌর শহরের মালসন গ্রামে। তবে সেটির বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীরা জানায়, প্রায় দেড়শ বছর আগে এখানে নামাজ পড়া হতো। কে বা কারা মসজিদটি নির্মাণ করেছেন-এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে তারা ছোট বেলা থেকে দেখেছেন এই অবস্থায় আছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৭৭০ থেকে ১৭৯০ খৃষ্টাব্দের কোনো এক সময় এই মসজিদ বা ইমারতটি নির্মিত হয়। তৎকালিন সময়ে নাটরের রাণীভবানির পরিচালিত ভারত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জমিদারী প্রায় ১২৯৯৯ বর্গমাইল, যার মধ্যে এই আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কথিত আছে সেই সময় এই এলাকাটি হিন্দু বসতিপূর্ণ এলাকা ছিল।
সান্তাহার শহরের পাশে ছাতীয়ানগ্রাম ইউনিয়ন সদরে ছিল নাটোরের রাজা রামাকান্তের স্ত্রী রাণী ভাবানীর বাবার বাড়ি।
কথিত আছে যে, সেই সময় সান্তাহারের তারাপুর গ্রামে তারাবানু নামে একজন পরহেজগারী মুসলিম নারী বসবাস করতেন। তিনি নামাজ পড়ার জন্য একটি মসজিদ নির্মানের দাবি করেন রানী ভাবনির নিকট। কিন্তু তৎকালিন হিন্দু সমাজপতিরা এতে বাধা দেন। এ নিয়ে অনেক যুক্তিতর্কের পর পরবর্তিতে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি যেন না পায়,সেই জন্য শুধু একজন মুসল্লি যাতে নামাজ পড়তে পারে সেই উপযোগী একটি মসজিদ রানীভবানী নির্মাণ করে দেন। চুন-সুড়কি দিয়ে তৈরি স্থাপনাটি এতোটাই পুরোনো যে, প্রথমে দেখে মসজিদ হিসেবে বোঝা কঠিন।
বর্তমানে এই ক্ষুদ্র মসজিদ বা ইমারতটি কোন যত্ন বা সংস্কার না থাকায় এটির ইট খুলে পড়তে শুরু করেছে। মসজিদটি ঘাস,লতা পাতায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে। এলাকাবাসি দ্রুত এই মসজিদটির সংস্কার ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে নেওয়ার দাবী জানান। তারাপুরগ্রামবাসি, সান্তাহার নাগরিক কমিটি,সান্তাহার প্রেস ক্লাব, অবিলম্বে এই মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর,বগুড়া আঞ্চলিক পরিচালক মোছাঃ নাহিদ সুলতানা বলেন, আমি ঐ স্থানটি ভিজিট করেছি। বিভিন্ন মিডিয়া এটিকে যে মসজিদ বলে যে দাবি করেছে,আমার কাছে সেটি মনে হয়নি। দেশের বা পৃথিবীর সর্বক্ষুদ্র মসজিদের কোন কাইটোরিয়ায় এটি পড়ে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষক প্রফেসর ড.কাজি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অষ্টাদশ শতাব্দির শেষের দিকে মোগল আমলে এই জাতীয় ইমারত বা মসজিদ রাজশাহী বিভাগে অনেকগুলি নির্মিত হয়েছে। এখানে দুই অথবা তিনজনের নামাজ পড়ার মতো পরিবেশ আছে, তবে এটি হয়তো সবচেয়ে ছোট মসজিদ বলা ঠিক হবে না হয়তো। এটি নয়ে আরও গবেষনা প্রয়োজন।। তবে এসব ইমারত আমাদের ঐতিহ্য। এসব স্থাপনা অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত।
উক্ত মসজিদটি বা ইমারত নিয়ে কাজ করছেন সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক. শিক্ষক, সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবীন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ব গবেষক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি, সাবাই বলেছে এটি সংরক্ষণ করা উচিত। আমিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো এই পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণ করুন।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা নিশাত আনজুম অনন্যা বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.