বশেমুরবিপ্রবি’র দুই ছাত্রীকে বিভাগীয় প্রধানের কুপ্রস্তাব

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ইঞ্জি. মো. আক্কাছ আলী নম্বর বেশি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ করেছেন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ওই দুই ছাত্রী।
ওই দুই ছাত্রীর সাত ও ছয় পেজের দুটি লিখিত অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি সবার কাছে ছড়িয়ে ফলশ্রুতিতে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগের সভাপতি পদ নিয়ে দ্বন্দের কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
লিখিত অভিযোগে দুই ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘নিয়মানুযায়ী তাদের থিসিস প্রোজেক্টের সুপারভাইজার হন বিভাগের শিক্ষক মাইনুল হাসান। তবে তিনি অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে যাওয়ায় বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ আক্কাস আলীর থিসিসের সুপারভাইজার হন। তার দু‘জনসহ তিনজন গ্রুপ করে থিসিসের বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেন।
গবেষণার সুবিধার্থে তারা বিভাগীয় অফিস ছাড়াও নীলার মাঠে, তার নির্মানাধীন বাসায় তারা গিয়ে দেখা করতেন। এ সময়গুলোতে তিনি গবেষণা ছাড়াও ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন এবং অপ্রীতিকর ব্যক্তিগত প্রশ্নে তারা বিব্রত হতেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত ২৬ ডিসেম্বর থিসিস ডিফেন্সের নির্ধারিত দিন কোড, রিপোর্টসহ পরীক্ষা দিতে গেলে তিনি জানান, তারা পরীক্ষা দিতে পারবে না। এসময় জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তারা বাড়িতে বসেই কাজ করতে থাকেন।’
অভিযোগে আরও জানান, ‘ছুটি শেষে তারা প্রতিদিনই একাধিকবার তার সঙ্গে দেখা করতে হত। পরে গত ২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের পছন্দমত থিসিসের কাজ শেষ করে তার কাছে গেলেও তিনি সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এরমধ্যে দুজন আগে চলে গেলে এক ছাত্রীকে শুক্রবার একা দেখা করতে বলেন। এতে দুশ্চিন্তায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ছাত্রী তার অভিযোগেও এটি উল্লেখ করেছেন। ওইদিন তাকে সারারাত তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয়। ২৫ জানুয়ারি তাকে অনুমতি নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তবে অন্তত একজনকে রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের জন্য থাকতে বলেন আক্কাস আলী।
ওইদিন দুপুর তিনটায় তার আদেশমত এক ছাত্রী বিভাগে গিয়ে তালাবদ্ধ পান। এসময় স্যারকে ফোন দিলে তিনি বিভাগের ভেতর থেকে এসে তালা খুলে দেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দীর্ঘ এক ঘন্টা রিপোর্ট দেখেন এবং ছোটখাট কিছু অ্যালগরিদম নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিছু ভুল খাতায় লিখে নেন তিনি।
রিপোর্ট দেখা শেষ হলে তিনি ব্যাগ গুছিয়ে বের হতে উদ্যত হলে ওই শিক্ষক তার কাছে আসার চেষ্টা করেন। এসময় ওই ছাত্রী তাকে সাবধান করে বলেন, স্যার আপনি কি বুঝতে পারছেন, আপনি কি করছেন। তখন তিনি কাকুকি করতে থাকেন এবং বিভিন্ন অপ্রীতিকর কথা বলতে থাকেন।
এসময় তার ভাষা প্রকাশ করা লজ্জাজনক বলেও উল্লেখ করেছেন ওই ছাত্রী।
ফেসবুকে প্রকাশিত লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, এসময় ওই শিক্ষক ‘আমাকে শুধু ধরতে দাও’ এরকম বিভিন্ন বাজে প্রস্তাব করতে থাকে এবং জোর করতে থাকেন। এসময় জোর করে ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ওই শিক্ষক বলেন, ‘তুমি যাবে কীভাবে? বাইরের গেটে তো তালা দেওয়া।’
এ সময় ওই ছাত্রী ভয় পেয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে শিক্ষক তাকে রেজাল্টের প্রলোভন দেখাতে থাকেন। তবে ছাত্রীটি জবাবে বলেন, ‘রেজাল্ট, সার্টিফিকেট কিছু লাগবে না, শুধু আমাকে এখান থেকে যেতে দেন। আপনি আমার শিক্ষক, আপনার ছোট একটা বাচ্চা আছে, আল্লাহকে মানেন। আল্লাহকে মানেন।’
এভাবে ১৫-২০ মিনিট চেষ্টার পর তাকে রাজি করাতে না পেরে ওই শিক্ষক তাকে বলেন, ‘ঠিক আছে আমি তালা খুলে দিচ্ছি। স্বাভাবিক হও, কান্না থামাও। আমি তালা খুলে দিয়ে আসব, তারপর তুমি বের হবা। ঐ মুহুর্তে ছাত্রীটি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে যান।’
পরে ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আবার সেখান থেকে চলে যান। এখনও তারা পরীক্ষার রেজাল্ট পাননি এবং এ নিয়ে শঙ্কিত। এছাড়া ওই শিক্ষক অভিযোগকারী ছাত্রীকে ফোন দিয়েছেন এবং সামনা-সামনি দেখা করতে বলেছেন। তবে সে সাহস এখন তার নেই বলেও জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।
অভিযোগে থিসিসের বাহানায় শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এরুপ অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়েছেন ভূক্তভোগী দু’ছাত্রী।
ভূক্তভোগী এক ছাত্রী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এই অভিযোগটা আমরা বিভাগের শিক্ষকদেরকে দিয়েছি এবং তাদেরকে বিস্তারিত জানিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে জানাতে অভিভাবকসহ ভিসির সঙ্গে দেখা করারও চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি সময় দেননি। এছাড়া ইটিই বিভাগের ফাতেমা নামের একজন শিক্ষিকা এ ব্যাপারে কাজ করছিলেন।’
তিনি আরও জানান, ‘প্রক্টরের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমরা কোন কথা বলিনি। তবে বিভাগের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। এছাড়া শিক্ষকেরা এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে জড়িত ইটিই বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা বলেন, ‘আমি তাদের কাছ থেকে ব্যাপারটি পুরোপুরি শুনতে পারিনি। এছাড়া পরে ব্যস্ততার কারণে এ ব্যাপারে আর কোন খোঁজও নেওয়া হয় নি। তবে এর একটা সমাধান হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক ইঞ্জি. মো. আক্কাছ আলী বিটিসি নিউজকে
বলেন, ‘এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। ওই তিন ছাত্রীসহ আরও অনেকেই থিসিসের জন্য একসাথে বসতেন। এছাড়া শুক্রবার দু‘জন ছাত্রী ছিলেন। এক ছাত্রী অসুস্থ হওয়ায় বাড়ি চলে যান।’ তিনি বলেন, ‘বিভাগের একজন অ্যাসিস্টেট প্রোফেসর এগুলো ঘটাচ্ছেন। তিনি আমার চেয়ারম্যান হওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া ওই দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধেও বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসা হচ্ছে।
বলেন, ‘এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। ওই তিন ছাত্রীসহ আরও অনেকেই থিসিসের জন্য একসাথে বসতেন। এছাড়া শুক্রবার দু‘জন ছাত্রী ছিলেন। এক ছাত্রী অসুস্থ হওয়ায় বাড়ি চলে যান।’ তিনি বলেন, ‘বিভাগের একজন অ্যাসিস্টেট প্রোফেসর এগুলো ঘটাচ্ছেন। তিনি আমার চেয়ারম্যান হওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া ওই দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধেও বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রক্টর অফিসে তাঁরা আসেনি। তাছাড়া লিখিত অভিযোগ তারা করেন নি। তাঁরা না আসলে ব্যবস্থা কীভাবে নেব? ওই ছাত্রী আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দু‘জন নয়, একজন ছাত্রীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এরপর তাকে পরীক্ষা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে কোন ছাত্রীকে নিয়ে বসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রক্টরসহ তাকে নিয়ে বসে এ ব্যাপারে উনাকে কড়াভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই দুই ছাত্রী মাস্টার্স শেষ করে চলে গেছে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি শাফিউল কায়েস। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.