চট্টগ্রাম ব্যুরো: বজ্রসহ কালবৈশাখী ঝড়ে তলিয়ে গেছে নগরীর চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। উপরে গেছে কাচা ঘরবাড়ি। বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ।
সোমবার (৬ মে) বিকেল ৩টার পর থেকে বজ্রসহ কালবৈশাখীর ভারী বৃষ্টি শুরু হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় সড়কে চলমান এক সিএনজি চালকের পেটে শিলাখন্ড ঢুকে গুরুতর আহত হয়েছেন। বিকেল ৫টার দিকে কমে আসে বৃষ্টিপাত।
কর্মব্যস্ত দিন শেষে এমন বৃষ্টিতে নগরবাসী স্বস্তি পেলেও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। নগরবাসীর ভাষ্য, জলবদ্ধতা নিরসনে গত ৫-৬ বছর ধরে কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। যা এখন শেষের পথে। এরপরও বৃষ্টিপাতের পর সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর এমন কোন এলাকা নেই যেখানে সড়কে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।
নগরবাসীর তথ্যমতে, বৃষ্টিপাতে নগরীর ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, কাপাসগোলা, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালি, চাক্তাই, বাকলিয়া, সদরঘাট, পতেঙ্গা, হালিশহরের সব এলাকার সড়ক ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে।
ফলে সড়কের কোথাও যানবাহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে স্কুল ছুটির পর চরম বিপাকে শিক্ষার্থীরা। অনেকে পানি কমার জন্য ঘণ্টাব্যাপী রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছেন।
নগরীর জিইসি এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার ধারে হকার ও পথচারীরা রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলের সামনে কোনোমতে মাথা গুঁজেছেন। এর মধ্যে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নুরুল আলমের সাথে।
তিনি বলেন, যে বৃষ্টি আর বাতাস। এই দোকানে এসে আশ্রয় নিলেও শরীরের ৮০ শতাংশই ভিজে গেছে। আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় যেতে পারছি না। সকালে রোদ থাকায় ছাতাও আনিনি।
নগরীর দুই নম্বর গেটের বাসিন্দা জাকির হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, জিইসি এসেছিলাম একটি কাজে। বাসার দিকে যাবো ঠিক ওই মুহূর্তেই ঝুম বৃষ্টি। এখন দাঁড়িয়ে আছি বাস পাচ্ছি না। সড়কে সিএমজি অটোরিক্সাও নাই। কোমর সমান পানিতে কোন গাড়ি চলবে না। তাই অপেক্ষায় আছি পানি কমার জন্য।
নতুন ব্রিজ এলাকায় কথা হয় সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা কাউছার হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, খুলশীতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম দুপুরে। হঠাৎ এমন বৃষ্টি আসবে ভাবিনি। আর রাস্তায় পানি উঠে গেছে। গাড়িও পাচ্ছি না।
কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসা তন্নি পানির ¯স্রোত ডিঙ্গিয়ে পায়ে হেঁটে বাসার দিকে ছুটছিলেন। তিনি বলেন, সকালে স্কুলে আসার সময় রোদ ছিল। এখন বৃষ্টিতে সড়কে কোমর সমান পানি উঠেছে। বাসার সাথে যোগাযোগ করারও কোন সুযোগ নেই। সড়কে গাড়িও নেই। তাই জলে ভিজে বাসায় যাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালবৈশাখীর তান্ডবে নগরের বিভিন্ন কলোনির কাঁচাঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উড়ে যায় বিভিন্ন বাড়ির চাল। নগরের জাকির হোসেন রোডের এমইএস কলেজ এলাকায় সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। পরে স্থানীয়রা এবং পথচারীরা মিলে সেটি সরানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জাকির হোসেন রোডে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে এম ই এস কলেজ মোড় থেকে জিইসি মোড়ের যানচলাচলে কিছুটা বিঘœ ঘটছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা সরাতে একযোগে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
খুলশী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নুর উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া কারণে দুইটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সংযুক্ত ট্রান্সফরমার রাস্তায় ভেঙে পড়েছে। সংযোগ বন্ধ থাকায় কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার আমজুরহাট, কমলমুন্সির হাট, বাইপাস ও চন্দনাইশের কাঞ্চননগর এলাকায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলার কয়েকটি স্থানে গাছ পড়ে যানচলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। সেখানে শীলাবৃষ্টি হয়েছে। সড়কে চলমান সিএনজির প্লাস্টিকের ছাদ ছেদে চালকের পেটে শীলা ঢুকে গেছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এটিই মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টিপাত। এতে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতে নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। নগরীর সড়কগুলো ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত ওয়েবসাইট একুওয়েদারের তথ্য বলছে, আজকে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলজট সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাসান সামশ বলেন, চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতে সড়কে পানি জমবে কিছুটা, এটা স্বাভাবিক। আবার ওই পানি দ্রুত নেমেও যাবে। এটাই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল। তবে চট্টগ্রামে এখনো জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প শেষের পথে হলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিশ্চয় সুফল মিলবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.