পেশাজীবীদের আন্দোলনে ষড়যন্ত্র দেখছে না সরকার

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন অংশের আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র নেই বলে মনে করে সরকার। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এসব আন্দোলনে আমরা কোনও ষড়যন্ত্র দেখছি না। গত ১৫ বছরের কুশাসনে মানুষ আন্দোলনই করতে পারেনি। অনেক গ্রুপ, অনেক ধরনের মানুষ আছেন, কর্মজীবী, পেশাজীবী আছেন, বিভিন্ন প্রেশার গ্রুপ আছে। এখন তারা ভাবছেন— তাদের দাবিগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুনবে। আমরাও তাদের কথা শুনছি।’
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
স্পিকারের পদ শূন্য হওয়ায় সংসদ সচিবালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে, এ কারণে বিষয়গুলো আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দেখবেন বলে উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। সংসদ সচিবালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিষয়টি আইন উপদেষ্টা দেখভাল করবেন বলে  তবে তিনি জানান।
সরকারি গাড়ির বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকারি গাড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কতগুলো গাড়ি আছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। এটার মাধ্যমে সরকারের কতগুলো গাড়ি রয়েছে— তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যাবে। গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।’
নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও কোচের বেতন বকেয়ার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ সমস্যাটা বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আমলের সমস্যা। আমরা খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাচ্ছি, দ্রুত ঘোষণা পাওয়া যাবে। একইসঙ্গে ছেলে ও মেয়ে দলের বেতনের সমতার বিষয়ে কথা হচ্ছে বিসিবি ও বাফুফের সঙ্গে।’ 
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহেদ উদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রতিনিধিরা সংকট সমাধানে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘ঢাবির মধ্যে তাদের জন্য আলাদা একটি জায়গা ঠিক করা হবে, যেখানে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডগুলো করা হবে। তাদের আলাদা রেজিস্ট্রার, কর্মকর্তা থাকবে। বিষয়গুলো ঢাবি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলেই করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত থাকবে।’
সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যাবে বলে মনে করেন কিনা— এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা রাস্তায় যে আন্দোলন করছেন তা শেষ করবেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা আশা করি, আজকেই তাদের আন্দোলনের শেষ দিন।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনও ইস্যু থাকলে তা নিয়ে কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আমাদের উপদেষ্টারা চান— কোনও সমস্যা হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে। তার মাধ্যমে সুফল পাবো।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্কের বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া চাচ্ছে তাদের যে ভিসা সেন্টার নয়াদিল্লি নিয়ে আসার জন্য। অভিবাসন বিষয়ে ইরেগুলার অভিবাসন নিয়ে আরও জোরদার কথা বলতে চাচ্ছে দেশটি। নিয়মিত অভিবাসন যেন আরও বাড়ে— সে বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে।’ তারা দেখবেন বলেও জানান তিনি।
ভিসার পরেও মালয়েশিয়া যেতে না পারে ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারবে বলে বলে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ কাজটা আমরা শুরু করেছি। তাদের ভেরিফিকেশনের কাজটা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত তারা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।’
সার্চ কমিটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার খুঁজে বের করা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে যারা নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্যতা আছে, দায়িত্বপালন কালে নিরপেক্ষতা দেখিয়েছেন, নির্বাচন করা বা প্রশাসন চালানোর যোগ্যতা দেখিয়েছেন। এটা বৃহৎ কাজ, তাদের ওনারা খুঁজে বের করবেন এবং নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেই নির্বাচনের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’
আগের সরকারগুলো রাজনৈতিক কারণে বিসিএসে নিয়োগ বাতিল করেছিল। এবার ৪৩তম বিসিএসে ৯৯ জনের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। এটা পুরানো প্রক্রিয়াকে অনুসরণ, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘এগুলো পিএসসি দেখবে। তারাতো স্বাধীনভাবে কাজ করে। তাদের সঙ্গে কথা বললে উত্তর দিতে পারবে।’
যানজটে নাকাল নগরবাসী, তা সমাধানে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার আশু সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছেন। উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে— গত ১৫ বছরের কুশাসন। যার ফলে বাংলাদেশের অনেক গ্রুপ, অনেক ধরণের মানুষ আছেন, কর্মজীবী, পেশাজীবী আছেন, বিভিন্ন প্রেশার গ্রুপ আছে। এরাতো গত ১৫ বছরে কোনও আন্দোলনই করতে পারেনি। এখন ওরা ভাবছেন তাদের দাবিগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুনবে। আমরাও তাদের কথা শুনছি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তারা রাস্তায় প্রতিবাদ করছে। এটা একটা বিষয়।’ দেশের সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, ‘সব বিষয়ে আমাদের মনোযোগ আছে। আমরা চেষ্টা করছি নাগরিকের দুর্ভোগ কীভাবে কমানো যায়।’
বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তিনবার থেকে বাড়িয়ে চারবার কী কারণে করা হয়েছে— এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘এসব আন্দোলনে আমরা কোনও ষড়যন্ত্র দেখছি না। পোশাক খাতে অস্থিরতার মূল বিষয় হচ্ছে— কয়েকটা কারখানার মালিক পালিয়ে গেছেন, শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানা চালু আছে। একটা-দুইটা পোশাক কারখানায় আগেও আনরেস্ট হতো। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি— এগুলো যাতে আনরেস্ট না হয়। সবকিছুর সুষ্ঠু সমাধান হয়।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিষয়ে সরকারে আপত্তি বিষয়ে কোনও উত্তর পাওয়া গেছে কিনা প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা আমাদের কনসার্ন জানিয়েছি, চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.