পলাশবাড়ীতে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে ছড়াছড়ি।। ভুল চিকিৎসায় ঘটছে মৃতের ঘটনা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় এমনকি ইউনিয়নেও গড়ে উঠেছে নিবন্ধন ছাড়া অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগোনষ্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পৌরসভার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অননুমোদিত শত শত প্রাইভেট হাসপাতাল,ক্লিনিক,ডায়াগোনষ্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক।
এসব প্রতিষ্ঠানে টাকার জন‍্য রোগীকে হয়রানি করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে হরহামেশা। অনেক সময় ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়ারও অভিযোগ অনেক।
এসব অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগও অনেক। যেমন,নিউ লাইফ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মা’সহ জমজ শিশু নিহতের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে ভুক্তভোগী এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কোনো চিকিৎসক, নার্স, প‍্যাথলজিষ্ট বা টেকনিশিয়ান নেই। নেই কোন ঠান্ডা রুম কিংবা পরিপাটি আলো-বাতাসের ব‍্যবস্থা।নেই বড় কোন বিল্ডিং ঘর।
এসব অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক গড়ে উঠেছে বিল্ডিংয়ের চিপায়, বাসা বাড়ীর সামনের কোন সরু গলি কিংবা কোন দোকান ঘরে। যেখানে ঢুকলে গরমের তাড়নায় টেকাই মুশকিল হয়ে যায়। সেখানে ফ‍্যানের বাতাসও দ্বিগুন গরম। বাহিরের হাওয়া বাতাসের কোন ব‍্যবস্থা নেই এমন বদ্ধ ঘরে।
সরকারি নিয়মকানুনের কোন তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে ব‍্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন রোগীরা।
পলাশবাড়ী উপজেলায় অসাধু ব‍্যবসায়ীরা ক্লিনিক, হাসপাতাল,ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক দিয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রত‍্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে যাচ্ছে। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক চলছে চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা।
কোনো কোনোটির লাইসেন্স থাকলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং তা হালনাগাদ করা হয়নি। অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স পযর্ন্ত নেই। অবৈধ ক্লিনিকগুলো মানসম্পন্নহীন।
এসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়ার জোর দাবি সচেতন মহলের। পাশাপাশি ডাক্তারদেরও অনুমোদনহীন ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে যাওয়া ঠিক নয়। অবৈধ কিংবা মানহীন ক্লিনিকগুলোকে শুধুমাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হলে হবে না,এগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ হাসপাতাল,ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ও ডেন্টাল ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও চলমান। কোন বাঁধা ছাড়াই রমরমা ভাবে চলছে অধিক সংখ্যক অনুমোদনহীন হাসপাতাল,ক্লিনিক,ডেন্টাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সূত্রে জানায়,বর্তমানে একটি হাসপাতাল,ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনা করার জন‍্য প্রায় ২১টি ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াও আরও যেসব দফতরের লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স বা অনুমতি,ফার্মেসী পরিচালনা কাউন্সিলের,পরিবেশ অধিদপ্তরের,জেনারেটর, ব্লাড ব‍্যাংকের, ক‍্যাফেটরিয়া ও লন্ড্রি,বিএসটিআই,,গভীর নলকূপ,আণবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্সসহ মেডিকেল ম‍্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে থাকতে হবে।
এসকল নিয়ম নীতি না মেনে অবাধে চলছে পলাশবাড়ী উপজেলায় ক্লিনিক,হাসপাতাল,ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে প্রতারণা। ২০২২ সালের ২৬ শে মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশের অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা চালু রয়েছে।
কিভাবে চালু রয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ব‍্যাঙের ছাতার মত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও অনুমোদনের ব‍্যাপারে কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
পলাশবাড়ী পৌরসভার ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে মহাসড়কের উপর অবস্থিত নিউ লাইফ ক্লিনিকে গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভুল চিকিৎসায় মা’সহ নবজাতক জমজ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন‍্য উঠে পরে লেগেছে। নিহত প্রসূতি মায়ের বাড়ী পৌরসভার বাড়াইপাড়া গ্রামে। তার স্বামীর বাড়ী কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বড় শিমুল গ্রামে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মো: শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.