পলাশবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটা বিপন্ন পরিবেশ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় চলছে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি। পুড়ছে কাঠ। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের তোয়াক্কা না করে ব‍্যবহার করা হচ্ছে কাঠ যা সম্পূর্ণ নিষেধ।তা সত্বেও বছরের পর বছর ওই সব ভাটা বহাল তবিয়তে ইট তৈরির কাজ অব‍্যাহত রেখেছেন।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙ্গে দেওয়ার মুচলেকা দিলেও কয়েক দিন বিরত থেকে আবারও ইট তৈরির কাজ পুরো দমে চালিয়ে যান।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়,সড়ক-মহাসড়কের পাশে,তিন ফসলি জমির মাঝে,জনবসতি এলাকায়,সরকারী প্রাথমিক বিদ‍্যালয় ঘেষে,মসজিদের সামনে ইটভাটার ছড়াছড়ি। যেমন বরিশাল ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে নুনিয়াগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়টি ইটভাটা ঘেষে তৈরী করেছেন গোপাল চন্দ্র।
এ ইটভাটায় গতবছর ভ্রাম‍্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি ইটভাটাটি বন্ধ হয়নি। এদিকে গোপাল চন্দ্রের ছোট ভাই গোকুল চন্দ্র পলাশবাড়ী পৌরসভার বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামে আরও নতুন একটি ইটভাটা তৈরী করেছেন। এই ইটভাটায় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ভাটাটি বন্ধ করেছিল। এবং চিমনিটি মালিক নিজে ভেঙ্গে ফেলবেন বলে মুচলেকা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অবধি ভাটাটি অপসারণ কিংবা চিমনি ভাঙ্গা হয়নি।
বতর্মানে ভাটাটিতে ইট প্রস্তুতের কাজ চলছে। অপরদিকে বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ইটভাটাটিতেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন গত বছর অভিযান চালিয়ে ভাটাটির চুল্লিতে পানি ঢেলে ভাটাটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই ভাটার মত আরও বেশ কয়েকটি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাটাগুলো চলছে ওই আগের মতোই। আর সবগুলো  ইটভাটায় কাঠ পুড়ানো নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিটি ইটভাটায় সমান সংখ্যক কাঠ পুড়ানো হয়। এসব ইটভাটা চলানো হচ্ছে লাইসেন্স ছাড়াই।
অনুমতি বিহীন এসব ইটভাটা চালানো হয় ম‍ানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এসব ইটভাটার গ‍্যাস ভাটা শেষে যেদিন ছেড়ে দেওয়া হয়,সেদিন কৃষকের শত শত বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে যায়। কৃষকেরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয় না।
স্থানীয়রা বিটিসি নিউজকে জানান,মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন। পানি ঢালা হয় চুল্লিতে এবং পানি দিয়ে ভাটার আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাটা মালিকেরা ফের ভাটা প্রস্তুত করে আবারও ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করে দেন।
ভাটার আশপাশের এলাকাবাসিরা বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রশাসন তো দেখছে ভাটাগুলো অবৈধ ও ইট তৈরির প্রক্রিয়াও অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? আইনে রয়েছে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের লাইসেন্স ব‍্যতিত ইট প্রস্তুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৮ এর ‘ঘ’তে বলা আছে,কৃষি জমি ব‍্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধ। পরিবেশ নিয়ে যারা চিন্তা করেন।
তারা বলেন,ইটভাটার ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। যথাযথ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সময়ে সুপারিশমালা দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা বিটিসি নিউজকে বলেন, এভাবে ইটভাটা চলতে থাকলে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে। জমিগুলো থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করার  ফলে। জমিগুলোতে আর ফসল হচ্ছে না। সব সময় পানি জমে ফসল নষ্ট হচ্ছে। একজনের দেখাদেখি অন‍্যজনকে মাটি বিক্রি করতে বাধ‍্য হতে হচ্ছে। জমি উচু-নিচু হলে জমিতে পানি আটকাতে অসুবিধা হয়। তখন ফসল ফলাতে কষ্ট হয়। ফলন ভালো হয় না। বিভিন্ন সমস্যা মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মো: শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.