নাটোর প্রতিনিধি: দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থবেঙ্গল চিনিকলের সাধারন আখ চাষীরা চিনিকলে আখ সরবরাহের পূর্জি (চিনিকলের আখ সরবরাহপত্র) পাচ্ছেন না।
বিনামূল্যে সরবরাহের এই পূর্জি অসাধু ব্যক্তিদের নিকট থেকে তাদের ৭০০ থেকে হাজার টাকায় কিনে চিনিকলে আখ সরবরাহ করতে হচ্ছে। সেখানেও উৎকোচ না দিলে ওজনে বড় ধরনের কারচুপি করা হচ্ছে। ফলে ৪০-৫০কিলোমিটার দূর থেকে তারা আখ নিয়ে জেলা সদরের নাটোর চিনিকলে সরবরাহ করছেন।
এই চিনিকলের আখ চাষের জন্য নিজস্ব চার হাজার ৯৫১ একর জমি থাকলেও লিজ দেয়া আছে এক হাজার ২৬ একর। বাকী জমি কৃষি খামারের মাধ্যমে আখ চাষ করা হয়। লিজ গ্রহিতারা চিনিকলের এসব জমিতে আখ চাষ না করে বেশি লাভের আশায় করছেন আলু ও মশুর ডালের চাষ।
প্রকৃত চাষীদের না দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে নিজের কাছের মানুষদের নিকট এসব জমি লিজ দেয়ার অভিযোগ যুগযুগ ধরে চলে আসলেও কোন প্রতিকার মেলেনা। আখ চাষীরা বলছেন, এই দূর্নীতির সাথে চিনিকলের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত প্রায় সকলেই জড়িত আছেন।
তবে বরাবরের মতোই সংশ্লিষ্টরা এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত ১৫ নভেম্বর দুই লাখ টন আখ মাড়াই করে ১১৭ আখ মাড়াই দিবসে ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে এই চিনিকলের মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন করা হয়।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর তৎপরতার কারণে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
নর্থবেঙ্গল চিনিকলের আখ চাষী উপজেলার দিলালপুর গ্রামের শ্রী বিপ্লব কর্মকার জানান, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। নর্থবেঙ্গল চিনিকলে প্রতিমন আখ সরবরাহ করতে তার ভাড়া খরচ হয় ১০টাকা আর নাটোরে খরচ হয় ৩৫টাকা করে। তারপরও দালাদের নিকট থেকে হাজার টাকায় পূর্জি কেনার হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি নাটোর চিনিকলে আখ সরবরাহ করছেন।
লালপুরের আড়বাব ইউনিয়নের সাইপাড়া গ্রামের আখ চাষী মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি সাত বিঘা নিজের ও ১৩বিঘা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আখ চাষ করেছেন। বেশির ভাগ লিজ নেয়া জমিতে আখ চাষ করায় তাকে পূর্জি দেয়া হয় না। স্থানীয় মাধবপুর সাব সেন্টারে গিয়ে তিনি পূর্জি পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্ত দালালদের ৭০০ থেকে হাজার টাকা না দিলে কোন পূর্জি দেয়া হচ্ছে না।
বুধবার তার এলাকার সিআইসি (চিনিকলের স্থানীয় কর্মকর্তা) নাহিদ তাকে আগামী ১০-১৫দিনেও কোন পূর্জি দিতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। পূর্জি না পাওয়ায় জমি থেকে আখ কাটতে না পাড়ায় তিনি জমিতে রবিশস্য চাষ করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি লালপুর থেকে নাটোরে এনে আখ সরবরাহ করেন।
উপজেলার কেশবপুরের আখচাষী সাহাজুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ১০বিঘা জমিতে তিনি আখ চাষ করেছেন। তার প্রয়োজন ৬০ থেকে ৭০টি পূর্জি। নর্থবেঙ্গল চিনিকল থেকে গত একমাসে তাকে মাত্র দুটি পূর্জি দেয়া হয়েছে। পূর্জি না পাওয়ায় তিনি নাটোর চিনিকলে আখ সরবরাহের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু এর আগেই বিভিন্ন মহলের চাপে নাটোর চিনিকলও চিনিকল এলাকার বাহিরের আখ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এ সব অভিযোগ সর্ম্পকে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্ল্যা বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রাপ্য চাষীদের পুর্জি দেয়ার পর কোন কারণে তিনি বিক্রি করলে তার দায় তো চিনিকলের নয়। চিনিকলের কেউ এমন কান্ডে জড়িত নয় এবং ওজনে কারচুপির অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবী করেন।
নর্থবেঙ্গল চিনিকল এলাকায় উৎপাদিত আখ চাষীরা নাটোর চিনিকলে সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমস্যার সমাধানের জন্য আজই (বৃহস্পতিবার) বিকেলে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সকল চিনিকল এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সাথে জুম মিটিং আহবান করছে। চিনিকলের জমিতে আখের পরিবর্তে আলু মশুর ডাল চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, শুধুমাত্র রবিশস্য চাষ করার জন্যই তিন মাস মেয়াদে এসব জমি লিজ দেয়া হয়। তাই লিজ গ্রহিতারা নিয়ম মেনেই সেখানে রবিশস্য চাষ করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.