ফেনী প্রতিনিধি:নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ জনপদ। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর রেগুলেটর বন্যার পানির চাপে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শেষ সম্বল হারানোর শঙ্কায় শত শত পরিবার।
ভাঙন আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সাহেবের ঘাট সেতুর সংযোগ সড়কেও বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে সোনাগাজী উপজেলার সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সোনাগাজীতে ছোট ফেনী এবং সিলোনিয়া নদী তীরবর্তী এলাকার ৪০ স্থানে এরই মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য এ ভাঙনে এরই মধ্যে বসতভিটাসহ কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে স্থানীয় মানুষদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তার মতে, মুছাপুরে রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ না করা পর্যন্ত নদীভাঙন রোধ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আগামী বর্ষায় নদীভাঙন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন নদী তীরের মানুষজন।
সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট, কাটাখিলা, কালীমন্দির, বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুর, আউরারখিল, চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর স্লুইসগেট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনী পাড়া, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রাম, নবাবপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর, মজুপুর, সুলতানপুর, মোবারক ঘোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সড়ক, পুল, কালভার্ট, কয়েকশ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন লোকালয়ে এবং ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে জোয়ারের পানি। শুধু তাই নয়, ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সাহেবের ঘাট সংযোগ সেতুর সড়কেও বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে সোনাগাজী উপজেলার সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মুছাপুর রেগুলেটরটির নির্মাণকাজ ২০০৫ থেকে শুরু হয়ে কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। ভারতীয় বন্যার পানির চাপে গত ২৬ আগস্ট রেগুলেটরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ যদি মুছাপুর রেগুলেটর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন না করে, তাহলে অচিরেই চরসাহাভিকারী গ্রামসহ সোনাগাজী উপজেলার অনেক গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে হাজার হাজার লোক সর্বহারা হয়ে পড়বেন।
বগাদানা ইউনিয়নের আউরারখিল দুর্গামন্দির ও সমাজ কমিটির সভাপতি মেঘনাথ চন্দ্র দাস জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত। তার ২০ নিকটাত্মীয় গত দুই সপ্তাহে নদীভাঙনের শিকার হন। তারা সব হারিয়ে এখন অন্যের বাড়ি ও বস্তিতে বসবাস করেন। এমন বহু পরিবার এখন সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
ফেনী জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন খোকন বিটিসি নিউজকে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়ায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরটি নির্মাণ ত্রুটিতে যে বা যারা জড়িত তাদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদবিটিসি নিউজকে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদীতে হারিয়ে যাওয়ার ফলে দুপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একের পর এক বাড়ি হারাচ্ছেন এ জনপদের বাসিন্দারা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুছাপুর রেগুলেটরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
সোনাগাজী উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মোস্তফা বিটিসি নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ এবং ভাঙনকবলিত এলাকায় নতুন প্রকল্প দিতে হবে।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির বিটিসি নিউজকে বলেন, সুলতানপুর, মজুপুর, কালি দাস পাহলিয়া, মুহুরী নদীর ভাঙনে নবাবপুরের সঙ্গে ফেনী সদর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফতেহপুর ও সুলতানপুরের প্রধান সড়কসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নবাবপুর ইউনিয়নবাসীর সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে নদীভাঙন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেকশন কর্মকর্তা এ এম রকি বিটিসি নিউজকে বলেন, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বিটিসি নিউজকে বলেন, নদীভাঙনের কারণে পুরো উপজেলা হুমকির মুখে। পাউবোসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার অবগত করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বিটিসি নিউজকে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নদীভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে মুছাপুর রেগুলেটর না করা পর্যন্ত ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান হবে না।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.