খুলনা ব্যুরো: নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার(৩১ অক্টোবর)বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম।
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতে তিনি শহিদ মীর মুগ্ধ-আবু সাঈদসহ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদেরকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের আত্মত্যাগে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। শিক্ষার্থীরা এখন দেশ সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দেখিয়েছে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়, কিভাবে একটি দেশকে নতুন করে সাজানো যায়। তাদের মাধ্যমেই নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি শুরু থেকে একাই এ সংগঠনকে পরিচালিত করেছেন। এখন দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে আছে। তাঁর অবর্তমানেও এই সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিরাপদ সড়ক চাইকে শুধুমাত্র সংগঠনে না রেখে এটিকে ইনস্টিটিউট, কেন্দ্র কিংবা কমিশনে রূপ দেওয়া উচিত। এটি করতে পারলে এখান থেকে চালকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গেলে আগে নিরাপদ সড়কের সনদপত্র নিতে হবে- সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এমন বিধান তৈরি করতে হবে। একই সাথে এ ধরনের ইনস্টিটিউট, কেন্দ্র কিংবা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রিও দেওয়া যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা সড়কের আইন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানবে এবং পরবর্তীতে তারা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন না মানার নেতিবাচক দিকগুলো জানাতে পারবে বলে আমি মনে করি।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর নিসচা’র পথচলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকায় বাসচাপায় দুইজন শিক্ষার্থী মারার যাওয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। তখন এই আন্দোলন আরও জোরদার হয়। আমার বিশ্বাস ছিল- শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব। ওই সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। যা দেশবাসীর হৃদয়ে নাড়া দেয়। পরবর্তীতে সরকার ২২ অক্টোবরকে ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। ৫ আগস্টের পর যখন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের মধ্যে সেই স্পিরিট দেখা গেছে। তারুণ্যের এই স্পিরিটের মাধ্যমে সবকিছুই সম্ভব। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় শুধু সচেতন হলেই চলবে না, আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। এজন্য সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সড়কে চলাচল করতে হবে।
নিসচা খুলনা জেলা শাখার সভাপতি মো. তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিসচা’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. লিটন এরশাদ। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন নিসচা’র মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতা মো. লিয়াকত হোসেন, খন্দকার সাজেদুল ইসলাম, বাবু কুমার রায়, নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শিলু, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নাঈম, নির্ঝর, আজাদ ও অন্তিক। বক্তারা খুলনা শহরের যানজট নিরসনের ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান এবং সঠিকভাবে তদারকির আহ্বান জানান।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চনসহ বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিসচা’র পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে নিসচা খুলনা জেলা শাখার সদস্যবৃন্দ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন নৈয়ায়িকের সদস্যবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.