নওগাঁয় কাগজের নৌকা ভাসিয়ে নদী বাঁচানোর আহ্বান

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট যমুনা নদী। কলকারখানাসহ বিভিন্ন বর্জ্যে হচ্ছে দুষণ। কেউবা ক্ষমতার বলে দখল করছেন। আবার নাব্যতার কারণে নদী ক্ষীণ হচ্ছে আসছে। ফলে দিন দিন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর এ নদীকে দূষণ, দখল ও স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে রঙিন কাগজের নৌকা নদীতে ভাসিয়ে প্রতীকি প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

‘নদী আমার মা’ স্লোগানে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কালিতলা শশ্বানঘাট এলাকায় ছোট যমুনার পশ্চিম তীরে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচীর আয়োজন করে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে কাগজের নৌকা নদীতে ভাসিয়ে ছোট যমুনাকে বাঁচানোর আহ্বান জানানো হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে একুশে পরিষদ সভাপতি অ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাপা নওগাঁ শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, একুশে পরিষদের উপদেষ্টা সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, প্রকৌশলী গুরুদাস দত্ত, বিন আলী পিন্টু, সহ-সাধারণ সম্পাদক নাইস পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, তপোবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমা দেবনাথ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ছোট যমুনা এক সময় খর স্রোতা নদী ছিল। প্রভাবশালী মহলের নদী দখলের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও নদীটি দিন দিন ক্ষীণতর হয়ে পড়ছে। এছাড়া বয়লারসহ বিভিন্ন কল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা, বসতবাড়ির আবর্জনা ইত্যাদি নদীটিকে বিষাক্ত ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এতে করে নদীটি ক্রমশ ভরাট হয়ে নদী তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারাচ্ছে। ছোট যমুনাকে বাঁচাতে অবিলম্বে দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা এবং নদী পুনঃখননের দাবি জানান তারা। মানববন্ধন শেষে ছোট যমুনার বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নদীতে কাগজের নৌকা ভাসায়।

সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, আমরা নদী মাতৃক দেশে বসবাস করি। নদী বাঁচলে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানুষ বাঁচবে। বাঁচবে জলজ প্রাণী। আমরা ছোট বেলায় এই নদীতে দেখেছি অনেক শুশুক ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। এখন সেই শুশুক আর দেখা যায়না। আবার বড় বড় যেসব নৌকা চলত তা আর চোখে পড়ে না। নদীর দুই ধারে গড়ে উঠা চাউলকলের বর্জ্য এবং বসতবাড়ীর আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে।

একুশে পরিষদের নওগাঁর সভাপতি অ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী বিটিসি নিউজকে বলেন, নওগাঁ শহরের মাঝ বরাবর বয়ে চলা এই নদীটি এক সময় ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বড় বড় নৌকা ও বজ্র চলত। অথচ এখন এই নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না। আর পানি না থাকার কারণ হচ্ছে উজানের পানি বন্ধ। আগের মতো নদীতে আর নৌযান চলাচল করতে দেখা যায় না। কর্মময় প্রাণোচ্ছল সেই নদী এখন মৃতপ্রায়। এছাড়া ছোট যমুনা, তুলশিগঙ্গা ও আত্রাই নদী ময়লা আবর্জনা ও বজ্রে দূষিত হচ্ছে। বিভিন্নভাবে দখল করা হচ্ছে। নদীকে দখল-দূষণ মুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভা সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বিটিসি নিউজকে বলেন, নদী খনন ও পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ছোট যমুনা নদীকে রক্ষার জন্য এলাকার সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচীর আলোকে বাস্তবায়ন করা হবে। যেসব চাউলকলের বর্জ্য নদীতে পড়ত তাদেরকে বর্জ্য না ফেলতে একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের বর্জ্যের লানা বন্ধ করে দিয়েছে। আশা করছি মার্চের মধ্যে নদীতে সকল বর্জ্য ও ময়লা ফেলা বন্ধ হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.