ধূমপান ছাড়ার অনন্য সুযোগ বর্তমান লকডাউন


ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার: ধূমপানের মতো একটি ক্ষতিকর অভ্যাস সবসময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর করোনা মহামারীর এই সময়ে তা ধূমপায়ীদের আরো বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধূমপান ছাড়তে বলছে বারবার। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে দেশটির ৩ লাখ মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে এবং ২৪ লাখ মানুষ ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

করোনা থেকে বাঁচতে ধূমপান ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে, ফুসফুসকে সুস্থ রাখা। তাছাড়া, সিগারেট কিনতে বারাবর দোকানে গেলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতেও ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছে অনেকে। অন্যদিকে, শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতেও অনেকে ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছে বা কমিয়ে দিচ্ছে।

ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কেন বেশি?

ধূমপানের ফলে স্বভাবতই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়; হার্ট ও ফুসফুসের নানা জটিল অসুখ দেখা দেয়। ফলে ধূমপায়ীরা সহজেই করোনার শিকারে পরিণত হন। আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দুর্বল হার্ট ও ফুসফুসের কারণে তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি।

ইউরোপীয় চিকিৎসকরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ধূমপানের ফলে ফুসফুসের সরাসরি কিছু বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন হয়, যা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতা তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হলে ধূমপায়ীদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ধূমপায়ীদের ভেন্টিলেটরও তুলনামূলক বেশি দরকার পড়েছে।

অন্যদিকে, বিড়ি-সিগারেট কিনতে বারবার বাড়ির বাইরে যেতে হয়, যা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া, আমাদের দেশে অনেকেই খোলা বিড়ি-সিগারেট কেনেন। দোকানির হাত থেকে নেয়া সেসব বিড়ি-সিগারেটেও ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। তাই সবদিক থেকেই ধূমপায়ীদের ঝুঁকি বেশি।

যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে পরিচালিত গবেষণার সংবাদ দেখা গেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। আদতে যথাযথ পর্যালোচনা (পিয়ার রিভিউ) ছাড়াই প্রকাশিত ওই গবেষণাটির বেশকিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গবেষণাটির নমুনার সংখ্যা খুবই স্বল্প। তাছাড়া সেই স্বল্প নমুনার মধ্যে আইসিইউতে নেয়া রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমন নানা কারণেই এই গবেষণাটি প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এমন কোনো প্রশ্নবিদ্ধ গবেষণাকে আমলে না নিয়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুসারে ধূমপান ছেড়ে দেয়াই নিরাপদ হবে।

ধূমপান ছাড়ার অনন্য সুযোগ বর্তমান লকডাউন

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ধূমপানের মতো আসক্তি ছাড়া অনেক কঠিন। ধূমপায়ীদের সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ বিড়ি-সিগারেট। তাই, স্বাভাবিক সময়ে কেউ ধূমপান ছাড়তে চাইলেও ধূমপায়ী বন্ধুবান্ধবের প্ররোচনায় তা ছাড়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু, করোনার কারণে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে এমন কোনো চাপ নেই। তাই কেউ চাইলে সহজেই ধূমপান ছাড়তে পারে। তাছাড়া, অনেকেই বাড়িতে ধূমপান করতে পারেন না; করাটা উচিৎও নয়। ফলে সুযোগের অভাবেও অনেককে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর এখন রমজান মাস, যে সময়ে এমনিতেই বহু লোক ধূমপান থেকে বিরত থাকে। এইসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বদঅভ্যাসটিকে চিরতরে বাদ দেয়ার সুবর্ণ সময় এখনই।

ধূমপান ছাড়ার কিছু টিপস

 ধূমপান ছাড়তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
 নিয়মিত শরীর চর্চার বা ব্যায়াম করলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়।
 শাকসবজি এবং ফল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
 সিগারেটের গন্ধ পেলে আবার ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে। তাই ঘরবাড়ি ও নিজের জামাকাপড় পরিস্কার করে ফেলুন।
 পরিবারের কাছে মানসিক সমর্থন ও সহায়তা চান।

লেখক : ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার, রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.