দৌলতপুরের ফুটপাত যেন মৃত্যুফাঁদ পথচারীদের জীবন ঝুঁকিতে, প্রশাসন নির্বিকার

খুলনা ব্যুরো: খুলনার দৌলতপুর শহরতলীর প্রাণকেন্দ্র ট্রাফিক আইল্যান্ড থেকে মীনাক্ষী ঈদগাহ মোড় পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ফুটপাথ এখন আর চলাচলের পথ নয় এ যেন এক জীবন্ত মৃত্যুফাঁদ! বেহাল দশা, গর্ত-খোয়া, ভাঙাচোরা স্ল্যাব আর হকারদের দখলে ফুটপাতটিতে স্বাভাবিক চলাফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিন হাজারো পথচারী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরা এই ফুটপাথ ধরে চলাচল করেন। কিন্তু বাস্তবে এটি পথ নয়, বরং খানাখন্দে ভরা বিপজ্জনক একটি রাস্তাসদৃশ খণ্ড। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তে জমে ওঠে পানি, সৃষ্টি হয় ছোট ছোট ডোবার মতো পরিস্থিতি। তখন এ ফুটপাথ হয়ে ওঠে একেবারে চলাচলের অযোগ্য।
দৌলতপুরের হোসেন বেকারির সামনে গতকাল সোমবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যান গৃহিণী রিতা বেগম। সাথে থাকা তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে রিঙ্কু ছিল ভয় আর কান্নায় বিধ্বস্ত। রিতা জানান, আমি তো ভাবতেই পারিনি, এত ব্যস্ত সড়কের ফুটপাত এমন ঝুঁকিপূর্ণ হবে! এখন পায়ে ব্যথা নিয়ে বাসায় বসে থাকতে হবে।
দৌলতপুর এলাকার এই ফুটপাথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুরাতন। এর পাশেই রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, ফার্মেসি, লঞ্চঘাট, পাইকারি আড়তসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেও দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বলছেন, এটি যেন খুলনা শহরের নগরপরিকল্পনার সবচেয়ে দুঃখজনক উদাহরণ।
হোটেল বোরাকের মালিক মোহাম্মদ শেখ মোর্তজা বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। ফুটপাতের এত ভয়াবহ অবস্থা, কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এটা অবিলম্বে সংস্কার করা না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ভগ্নদশার পাশাপাশি এই ফুটপাথ জুড়ে রয়েছে হকারদের দখল। ফলত মানুষ বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে মেইন রোডের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। আর এতে যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয় দোকানদার শওকত হোসেন, মনোহরি দোকানের লিয়াকত আলী, মোল্লা স্টোরের আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা ও কবীর ডিজিটালের ফাহিম শারিয়ার সবাই কেসিসির প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন,এই ফুটপাত সংস্কার এবং অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব শেখ মো. জুলফিকার আলী বিটিসি নিউজকে বলেন,এই ফুটপাথের জন্য এখনো কোনো এস্টিমেট বা পরিকল্পনা হাতে নেই। তবে ভৈরব নদীর তীরে পাইলিং প্রকল্প শেষ হয়েছে, ভবিষ্যতে এটি উন্নয়ন পরিকল্পনায় আনা হতে পারে। তার বক্তব্যে ফুটপাথ সংস্কারের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো সময়সীমা বা পদক্ষেপের আভাস পাওয়া যায়নি।
এলাকার সচেতন নাগরিক, প্রতিষ্ঠানপ্রধান, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বলছেন, আমরা উন্নয়নের কথা শুনি, কিন্তু বাস্তবে ন্যূনতম নিরাপদ হাঁটার পথ নেই! নগর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি না পড়া মানে আমাদের জীবনের প্রতি চরম অবহেলা। অবিলম্বে ফুটপাথ সংস্কার করতে হবে।
খুলনার দৌলতপুরের এই ব্যস্ততম রুটে ফুটপাথ সংস্কার একটি অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। দেরি করলে ক্ষয়ক্ষতির দায় কার? প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.