দিঘলিয়ায় এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন, আত্নহত্যা না হত্যা?

বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের উত্তর চন্দনীমহল (বোগদিয়া) গ্রামে তামান্না আনিকা নামক জনৈক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুটা আসলে রহস্য জনক। আর তার এ অকাল মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে এলাকায়।

তামান্নার ছোটবেলা থেকে লালনপালনকারী নানাবাড়ির স্বজনরা বলছে তামান্নার স্বামী মুস্তাকিনের শাশুড়ীর কাছে দাবী ছিল ইজিবাইক। আর এ ইজিবাইকের কারণেই তামান্নার স্বামীসহ বাড়ির লোকেরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। কারণ মৃত্যুর দিন দুপুরে তামান্না ও তামান্নার স্বামী মুস্তাকিনকে তামান্নার নানা ভ্যানে করে সুস্থ শরীরে এগিয়ে দিয়ে এসেছে।
এমন কি হলো যে তামান্না গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করবে। যৌতুকের জন্য তামান্নার স্বামী ও তার স্বজনরা মিলে তামান্নাকে হত্যা করেছে বলে জোর দাবী জানিয়েছে তামান্নার নানাবাড়ির স্বজনেরা।
মৃত তামান্নার শশুরবাড়ির স্বজনরা বলছে সে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করে। পর মুহূর্তে তামান্নার শাশুড়ি বুঝতে পেরে ঘরে প্রবেশ করে ওড়না খুলে উদ্ধার করে তামান্নার শাশুড়ি।
তাকে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে আত্নহত্যার পিছনে জোরালো কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। স্বামী মুস্তাকিন, শশুর, শাশুড়ি, ননদগণ সবাই এ প্রতিবেদককে জানান, তামান্নাকে মুস্তাকিন সম্পর্ক করে বিবাহ করে আনে। সে একটা ভাল মেয়ে। আমাদের সবাই খুব ভালো বাসতাম। তামান্না স্বামীর কোনো আত্নীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে মুস্তাকিন সাথে যেত। এত সুসম্পর্ক তাদের।
নানাবাড়ি থেকে বাড়ি এসে কেন আত্নহত্যা করল তার সুনির্দিষ্ট কারণ কেউ বলতে পারেনি।
এদিকে তামান্নার শশুর শেখ আনিসের বাড়ির পাশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, মুস্তাকিনের সাথে তামান্নার প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ হয়েছে। প্রথমে মেয়েটার স্বজনেরা এ বিবাহ মেনে না নিলেও পরবর্তীতে মেনে নিয়েছে। প্রথম দিকে আবেক ও ভালোবাসা কাজ করলেও পরবর্তীতে আবেগ ও ভালোবাসা লোভে পরিণত হয়। অবুঝ ও নরম মনের শিশু তামান্নাকে নানা জিনিস পাওয়ার মানসে তামান্নার স্বামী মুস্তাকিন, তামান্নার শশুর-শাশুড়ি যথাক্রমে শেখ আনিস ও রেহেনা বেগম, ননদ লাকী নানাভাবে মানসিক টর্চারিং করত। যা আমরা বাড়ি বসে শুনতাম।
ঘটনার দিন ইজিবাইক ও অন্যান্য জিনিসপত্র এবং নানাবাড়ি যাওয়া ও থাকা নিয়ে প্রথমে ঝগড়া বিবাদ হয়। ঝগড়া বিবাদের এক পর্যায়ে শারীরিক ও মানসিক টর্চারিং শুরু হয়। তাকে তার পরিবার শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এখন নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে মুখ খুলতে পারছিনা। আপনারা চেষ্টা করে দেখেন মেয়েটার এই অকাল ও জঘন্যতম হত্যার ন্যায় বিচার করাতে পারেন কিনা। কেননা একটা মহল ঘটনাকে জাল দিয়ে ঢেকে ফেলার চেষ্টায় দৌরঝাপ ও ছোটাছুটি করছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে।
এদিকে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আহসান হাবীব বিটিসি নিউজকে জানান, তামান্না কমপ্লেক্সে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল। তার আত্নহত্যার বাহ্যিক কোনো চিহ্ন বা সিনটম আমরা দেখতে পাইনি। তাই পোস্ট মার্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ বাবুল আক্তার বিটিসি নিউজকে বলেন, আত্নহত্যার কারণ পোস্ট মার্টেম রিপোর্ট ছাড়া এ মুহূর্তে কোনো কথা বলা যাবে না। কারণ মৃত তামান্নার বাহ্যিক কোনো সিনটম পাওয়া যায়নি।
পোস্ট মার্টেম রিপোর্টে যদি হত্যা করা হয়েছে তখন হত্যা মামলা দায়ের করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। রিপোর্ট আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরও জানান, তবে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
এদিকে তামান্নার লাশ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে তামান্নার লালন পালনকারী নানা বাড়িতে নিয়ে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তামান্নার স্বজনরাই শুধু নয় গোটা এলাকার মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
এদিকে তামান্নাকে গোছল করানোর সময় তার স্বজনেরা তার পিঠে ও মুখে শারীরিক নির্যাতনের অনেক চিহ্ন দেখতে পেয়েছে। এ সময় মৃত তামান্নার স্বজনরা দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ বাবুল আক্তারকে অবহিত করেছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, তামান্নার নানা মোঃ সোনা মিয়া ওরফে সাহেব আলী দিঘলিয়ার পানিগাতী দক্ষিণ পাড়া নিবাসী। তামান্নার মা মুক্তা বেগমের বিবাহ হয় একই এলাকার কাজী বারিউল ইসলামের সাথে। তানিয়ার বয়স যখন ৩ বছর তখন তানিয়ার পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর তামান্না আনিকাকে নানা সাহেব আলী ও নানী সাহিদা বেগমের কাছে লালিত পালিত হয়। তামান্নার মা মুক্তা বেগমের অন্যত্র বিবাহ হয়। তামান্না যখন বড় হয়ে ওঠে তখন প্রেমের সম্পর্কে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের উত্তর চন্দনীমহল (বোগদিয়া গ্রামের আনিস শেখের পুত্র মুস্তাকিনের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তার জীবনের এই শেষ পরিণতি নেমে আসে।
পানিগাতী গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার সর্বস্তরের মানুষের মনের জোর দাবী নিষ্পাপ ফুলের মত মেয়ে আনিকার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। এদিকে তামান্নার মৃত্যু রহস্য ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার হীন মতলবে একটা প্রভাবশালী মহল অজ্ঞাত কারণে পর্দার আড়ালে থেকে তামান্নার মৃত্যুর পর থেকে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে বলে তামান্নার স্বজনসহ এলাকাবাসী নানাভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.