ডিজিটাল গেরিলা ইমরানের তুরুপের তাস

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের এবারের সাধারণ নির্বাচনে ‘ডিজিটাল গেরিলা’ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তুরুপের তাস। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ইমরান খানের বিস্ময়কর জয়ের পেছনে বড় অবদান রেখেছে দলটির প্রযুক্তিনির্ভর ‘গেরিলা প্রচারণা।’
২০২৩ সালে ইমরান খান গ্রেপ্তার ও তার দলের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার নেপথ্যে রয়েছেন দলটির সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান জিবরান ইলিয়াস।
ইলিয়াসের প্রথম তুরুপের তাসটি ছিল ইমরান খানের ‘ভার্চুয়াল জনসভা’। জেলে বন্দি ইমরান খানের লেখা বক্তৃতা, পুরোনো বক্তৃতার ফুটেজ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয় নতুন একটি ভাষণ। মাসের পর মাস ইমরান খানের চেহারা না দেখার পরও এই ভাষণটিতে প্রথম তাকে কথা বলতে দেখা যায়, এতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন পিটিআই সমর্থকরা।
বারবার ইন্টারনেটের সমস্যা হয় ভাষণটি প্রচারের সময়ে, তবুও এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৭ ডিসেম্বর প্রচার করা এই ভাষণটি ছিল পিটিআইয়ের প্রথম ভার্চুয়াল জনসভা। এই সাফল্যের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় জোরেশোরে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে পিটিআই।
এরপর এক পর্যায়ে ইমরান খানের দলের প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ বাতিল করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে ইমরান খান বেশ জনপ্রিয়। দেশটির সাধারণ মানুষ ইমরান খানের ছবি আর তার প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ দেখেই ভোট দেয়। কিন্তু এবার ইমরানের দলের প্রচারণার প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ বাতিল করে দেওয়া হয়, অর্থাৎ তা ব্যবহার করে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।
এতে প্রশ্ন দেখা দেয়, তাহলে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কী প্রতীক ব্যবহার করবেন আর ভোটাররা তা জানবেনই কী করে? পাকিস্তানে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশেরও কম, তাই ভোটে জিততে হলে প্রতীক বা মার্কার পরিচিতি থাকা খুবই জরুরি। এই সমস্যা সমাধানেও ইলিয়াস অভিনব এক পন্থা বের করেন। একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়। সেখানে আসনের নাম লিখলেই চলে আসে ওই আসনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীর নাম ও তার নির্বাচনী প্রতীক।
রাষ্ট্রীয় ধরপাকড় ও বিভিন্ন রকমের হয়রানির মাঝে এসব প্রার্থীদের প্রচারণা ব্যহত হতে থাকে। তাদের সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, জনসভায় জড়ো হতে বাধা দেওয়া হয়, বাড়ি বাড়ি হয়ে গণসংযোগেও বিঘ্ন ঘটানো হয়। ফলে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ‘ভার্চুয়াল’ প্রচারণার দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন।
পাকিস্তানের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, ২৬৫ আসনের মধ্যে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯৬টি আসন পেয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪টি আসন পেয়েছে বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.