খুলনা ব্যুরো: তিন দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে খুলনা নগরীর বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে, যা শহরের জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অনেক এলাকায় বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। চলাচল ও দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।
এদিকে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা নগরীতে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
খুলনা নগরীতে ভারী বৃষ্টির কারণে খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনী, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল, বয়রা বাজার, গোবরচাকা নবীনগর, রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, রয়েল মোটেলের মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এবং জনসাধারণের চলাচলে চরম অসুবিধা তৈরি করেছে।
সড়কে দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকায় শ্রমজীবী, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী মানুষের চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী, কুয়েট রোডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ এলাকার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি এবং মাছের ঘের পানিতে ডুবে গেছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল সারা দিন-রাত ধরে চলতে থাকা বৃষ্টির পর আজ সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খান জাহান আলী হল তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে নিচতলার রুমগুলোতে। রাতে হঠাৎ রুমের ভিতর পানি ঢুকায় ভিজে গেছে বিভিন্ন মালামাল, বই খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।অকেজো হয়ে পড়েছে নিচ তলার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। একই অবস্থা খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ হল এবং শেখ মুজিবুর রহমান হলের। রুমের ভিতর পানি না ঢুকলেও তলিয়ে গেছে নিচতলা।
খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বিটিসি নিউজকে বলেন, নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীতে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ (সোমবার) দুপুরের পর থেকে টানা বৃষ্টিপাতের আর সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, কিছু স্থানে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান থাকায় পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি বের হতে সময় লাগছে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করেছে।
অন্যদিকে টানা ৩ দিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলার বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী মৌজার কয়েক হাজার মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষীদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসলও, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। মাছ চাষীরা তাদের বিনিয়োগ ও পরিশ্রমের ক্ষতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশার মধ্যে পড়েছেন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাছ চাষের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জেলার খুলনার কয়রায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা চার দিনের ভারি বর্ষণ তলিয়ে গেছে প্রায় শত শত মৎস্য ঘের। নষ্ট হয়েছে চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা ও ক্ষেতের ফসল। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের পুকুর, রাস্তাঘাট ও বাড়ির আঙিনা তলিয়ে গেছে।টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ নিয়ে বন্যা আতঙ্কে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.