টানা তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা তৃতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী শনিবার শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। জোটের শরিক দলগুলোর সমর্থন নিয়েই প্রধানমন্ত্রী হতে হচ্ছে তাকে।
গতকাল বুধবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জোটের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমার এনডিএ জোট সরকার গঠনে লিখিতভাবে সমর্থন দেন। এরপরই তৃতীয়বার সরকার গঠনের দাবি জানাতে বুধবার রাতেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হওয়ার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার মোদিকে এনডিএ-র সংসদীয় দলনেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবারই প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন মোদি। এটা হলে জওহরলাল নেহেরুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে গত মঙ্গলবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। আর প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন। কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তবে জোটগতভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের বেশি পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তারা পেয়েছে ২৯৩টি আসন। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২ আসন।
আবার জোট বদলালে ক্ষমতায় আসতে পারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। এই দুই নেতার অতীতে বিভিন্ন সময় জোট বদলের ইতিহাস থাকায় সন্দেহ আরো বেশি তৈরি হয়। কিন্তু গতকাল বিকেলে দিল্লিতে এনডিএ জোটের বৈঠকে হাজির হন নাইডু এবং নীতিশ। তারা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এনডিএ জোট সরকার গঠনে লিখিতভাবে সমর্থন দেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, এর বদলে স্পিকারের পদ চেয়েছে চন্দ্রবাবু নাইডুর দল। অন্যদিকে নীতীশ কুমার বরাবরই রাজনীতিতে তার এবং তার দলের স্বার্থ ছাড়া কোনও কিছুই করেন না। বিজেপি ব্যাকফুটে যেতেই দর কষাকষি শুরু করেছেন তিনি। নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে আনতে, পাল্টা নীতীশ দাবি করতে চলেছেন ৪ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ।
এই বৈঠকের পর তৃতীয়বার সরকার গঠনের দাবি জানাতে গতকাল রাতেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হওয়ার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদির। সঙ্গে থাকার কথা ছিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্র প্রদেশের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর।
এদিকে গতকাল দুপুরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর তার নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্যরাও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে নতুন সরকার দায়িত্বভার নেওয়ার আগ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদিকে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি।
মোদির সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ: লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরে দুইজন নেতা এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বিবিসিকে বলেন, নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার তো হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলে ফেলেন। এখন এই দুটি ক্রাচ বিজেপির গলায় ঘণ্টার মতো হয়ে গেছে। তারা দুজনেই পুরানো ওস্তাদ খেলোয়ার এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দুজনেরই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। এই ক্ষমতার সমীকরণে তারা নিজেদের পাওনা গণ্ডা বুঝে নেবেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলবেন যে, আমাদের এটা চাই,তবেই জোটে থাকব।
গত ১০ বছর যখন সরকার চালিয়েছেন মোদি তখন ক্ষমতা পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না। কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে, তবেই সরকার চলতে পারবে।
সঞ্জীব শ্রীবাস্তব আরো বলেন, এর অর্থ হল জোট ধর্ম মেনে, বাজপেয়ী মডেল যদি গ্রহণ করা হয়, তবেই সরকার চালনা সম্ভব হবে। তার কথায়, মোদির জীবনে এই মডেলে কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। গত ২২ বছরে তিনি তিনবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন। এখন হঠাত্ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরণ তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার যখন গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে, তখন এনডিএ জোটে ২৪টি দল ছিল। সেই সরকার টিকেছিল পাঁচ বছর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাই বাজপেয়ী সরকারকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রেখেছিল।
নৈতিক ও রাজনৈতিক হার হয়েছে মোদির: ইন্ডিয়া জোট
গতকাল বুধবার রাতে দিল্লিতে বৈঠকে বসেন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। বৈঠকে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, আমরা জোটবদ্ধ হয়ে ভালো লড়াই করেছি। দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করেছি। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা বিভিন্ন মৌলিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা প্রতিটি দলকে স্বাগত জানাচ্ছে ইন্ডিয়া জোট। একইসঙ্গে তিনি বলেন, জনমত স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে, তার কাজের ধরনের বিরুদ্ধে, তার রাজনীতির বিরুদ্ধে। স্পষ্ট নৈতিক হারের পাশাপাশি এটা মোদির জন্য বড় রাজনৈতিক হার। কিন্তু তিনি জনগণের ইচ্ছাকে নস্যাৎ করতে বদ্ধপরিকর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.