জাল দলিলে ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার-৭

বিশেষ প্রতিনিধি: একজনের নামেই সাতটি এনআইডি কার্ড। যে কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতি করে সাতটি ফ্ল্যাটের জাল দলিল তৈরি করে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতা জয়নাল আবেদীনসহ (৪০) সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩ মে) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত মাসে চারজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ নিয়ে এ চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বাকি গ্রেফতারকৃতরা হলেন: ইদ্রিসের প্রধান সহযোগী মো. রাকিব হোসেন (৩৩), এ চক্রের সদস্য জয়নালের ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মো. লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান মিঠু (৩০), এনআরবিসির ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)।
শনিবার (৪ মে) রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি হেডকোয়ার্টারে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে ফ্ল্যাটের জাল দলিল তৈরি করে ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতা ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছি আমরা। এর বাইরে আরও কেউ আছে কিনা তা বের করতে কাজ চলছে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘চক্রটি ফ্ল্যাটের জাল দলিল তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করে। এমন অভিযোগ পেয়ে চক্রটির অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় সিআইডি। এই চক্রের মূলহোতা জয়নাল আবেদীন। যার নামে রয়েছে সাতটি এনআইডি কার্ড। এসব কার্ডের মাধ্যমেই সে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জয়নাল নিজ নামে সাতটি এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলে। পরে ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিলের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা। এ প্রতারণা করে অবৈধ অর্থ দিয়ে জয়নাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি সাত তালা বাড়ি বানায়। তিনটি ফ্ল্যাট কেনে। মিরপুর ও আশকোনায় পাঁচটি ফ্ল্যাট কেনে। এমন ১১টি ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে সে অর্থ বিনিয়োগ করে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘আমরা এ প্রতারক চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নালকে গ্রেফতার করেছি। জয়নালসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করলেও আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। তাই বিস্তারিত তথ্য আমরা এই মুহূর্তে দিতে চাইছি না। তবে এর পেছনে যেই জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
প্রতারক চক্র কীভাবে বায়োমেট্রিক ছাড়া একাধিক এনআইডি করছেন সেটা সিআইডির জানা নেই উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘বায়োমেট্রিক ছাড়া তো এনআইডি কার্ড করা যায় না। একজনের বায়োমেট্রিকে একটি এনআইডি কার্ডই হওয়ার কথা। প্রতারকরা কীভাবে এটি করছে তা আমারও প্রশ্ন। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাইছি না। বিস্তারিত আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তারপর আপনাদের জানাব।’
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এনআইডি জালিয়াতি ও ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল টাকা লেনদেনের এমন অভিযোগের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। মূলত আপনাদের মতো একজন আমাদের অভিযোগ করেন, তিনি যে ফ্ল্যাট কিনেছেন সেই একই ফ্ল্যাট তিনজনকে বিক্রি করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা এ প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে যদি এমন এনআইডি জালিয়াতিসহ ব্যাংকের এমন লেনদেনের অভিযোগ থাকে বা আসে তাহলে আপনারা আমাদের জানাবেন। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘এর আগে আমরা এ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা রিমান্ডে নিয়েছি। রিমান্ডে তাদের দেয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গতকাল আমরা আরও সাতজনকে আটক করেছি। তাদেরও আমরা রিমান্ডে নিয়ে আরও তথ্য বের করতে পারব বলে আশা করছি।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.