(জাতিসংঘে যে কারণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুললেন নরেন্দ্র মোদি–ছবি: সংগৃহীত)
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উপলক্ষটা ছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক, আলোচনার বিষয় আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কোনও বৈঠকে সভাপতিত্ব করলেন। কারণ, পরিষদের ‘রোটেটিং প্রেসিডেন্সি’ এই চলতি আগস্ট মাসে ভারতের হাতে এসেছে।
গতকাল সোমবার (০৯ আগস্ট) নিউ ইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ অবতারণা করলেন সভাপতি নরেন্দ্র মোদি নিজেই।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদির বক্তব্যের মূল নিশানা ছিল চীন– কিন্তু চীনকে বার্তা দিতে তিনি টেনে আনলেন ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক প্রসঙ্গ। তবে প্রশ্ন হলো, মোদি ঠিক বলেছেনটা কী, যা নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অংশ নেওয়া সদস্য দেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘সামুদ্রিক ইস্যুতে বা সমুদ্রসীমা নিয়ে যেকোনও ধরনের বিরোধের মীমাংসা করতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে। প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গেও আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ ছিল, কিন্তু আমরা ঠিক ওভাবেই সেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছি।’
স্পষ্টতই ২০১৪ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ে যেভাবে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের সেই রায়ে কোনও পক্ষই পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি, তবে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি এলাকার সমুদ্রসীমায় অধিকার পেয়েছে। দুই দেশই সেই রায় মেনে নিয়েছিল– বাংলাদেশ বা ভারত কেউই আপিলের রাস্তায় হাঁটেনি।
এখন দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় যেভাবে চীন নিজেদের সামরিক ক্ষমতা জাহির করে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, প্রধানমন্ত্রীর মোদির মন্তব্য যে সেদিকে ইঙ্গিত করেই তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোনও সংশয় নেই।
দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘জাতিসংঘে মি. মোদি যে চীনকেই বার্তা দিয়েছেন তা পরিষ্কার। বেইজিংকে একটাই কথা তিনি বলতে চেয়েছেন, একুশ শতাব্দীর এই পৃথিবীতে রণতরী পাঠিয়ে বা অন্য দেশগুলোকে ভয় দেখিয়ে জলসীমা কব্জা করা যায় না।’
তার ভাষায়, ‘বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশির জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আছে, জাতিসংঘ আছে। সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য সামুদ্রিক আইনকানুনও আছে, সেগুলোর ভরসায় আদালতেও যাওয়া যেতে পারে। আর কূটনৈতিক আলোচনার রাস্তা তো সব সময় খোলা আছেই।’
ওই বৈঠকে সরাসরি নাম না করেও চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই)-এরও সমালোচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের শীর্ষ কূটনীতিকরা আবার বলছেন, ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে ভারত ও বাংলাদেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে লড়াই লড়েছিল। আজ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতির ভূমিকায় ভারতের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তেও বাংলাদেশকে শামিল করে সেই ইতিহাসের সাক্ষী করে নিলেন নরেন্দ্র মোদি। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.