জাতিসংঘে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা: আইনের শাসন নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে নাগরিকবান্ধব সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছি

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাষণ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাশাপাশি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করবার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে নাগরিকবান্ধব সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করে। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিশাল আত্নত্যাগ করেছিলাম তা গত পাঁচ দশকে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। বারবার আমাদের ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বে আমাদের জনগণকে অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে। সে অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই বছর আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী পালন করেছি যে অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল, যার ফলে আমরা বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অভিযাত্রা নতুনভাবে শুরু করতে পেরেছি। সেই বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে ও আমার সহকর্মীদের। ভেঙেপড়া রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংসারের। যে বিপুল জনসমর্থনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব পেয়েছিলাম, তার প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্যে সহজ পথ ছিল নির্বাহী আদেশে সংস্কার কাজগুলো করা। কিন্তু আমরা বেছে নেই কঠিন পথ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পথ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা যেখানে আর কোনো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব হবে না, কোনো নির্বাচিত নেতা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্বরূপকে ক্ষুণ্ন করতে পারবে না, কিংবা রাষ্ট্র ও জনগণের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হতে পারবে না। শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম, নারী অধিকারসহ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার জন্য আমরা ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। কমিশনগুলো জনমত যাচাই ও গভীর পর্যালোচনা করে বিস্তারিত সংস্কার কার্যক্রম সুপারিশ করে।
তিনি জানান, এ সংস্কার সুপারিশগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করি যারা ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে আলোচনায় বসে। এ কমিশনের লক্ষ্য ছিল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি দলমত নির্বিশেষে একটি টেকসই সামাজিক অঙ্গীকার তৈরি করা। আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ সফল হয়। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সকলে মিলে ‘জুলাই ঘোষণা’র মাধ্যমে এই সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। অর্থাত্ আগামী নির্বাচনে যেই দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে আর কোনো অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.