বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ছাত্রত্ব ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন। তিনি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা যায়, ফরহাদ হোসেন ২০১৮ সালে পোষ্য কোটায় প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ভর্তি পরে ক্লাস নিয়মিত করলেও পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি। একই সেমিস্টার পরপর ৩ বার অকৃতকার্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, একই সেমিস্টারে পর্যায়ক্রমে ৩ বার কোনো শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে তাকে ড্রপ আউট (ছাত্রত্ব বাতিল) হয়ে যেতে হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে ফরহাদ হোসেনের ছাত্রত্ব বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। ছাত্রত্ব না থাকার সত্ত্বেও ২০২২ সালে মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান ফরহাদ হোসেন।
গত ৫ আগষ্টের ছাত্র জনতার অভ্যুস্থানের পরে রাজনৈতিক পটভূমি পালাবদল হয়। এরপর থেকে ছাত্রত্ব ফিরে পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এই ছাত্রদল নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮৩ তম একাডেমিক কাউন্সিলর সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ছাত্রত্ব ফিরে পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বরাবর আবেদন করেছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, একাডেমিক কাউন্সিলর সভায় নিজের ছাত্রত্ব ফিরে পেতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে জোর লবিং করছেন ছাত্রদলের এই নেতা।
মো. ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কলেজ গেট দোকানগুলোতে চাঁদাবাজি অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ড্রপ আউট হওয়ার এই দীর্ঘ সময়ের পর নিয়ম অনুযায়ী তিনি ছাত্রত্ব ফিরে পেতে পারেন না। আশা করি, নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাত্রদলের এই নেতার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যাবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলর সভায় সে আবেদন করেছে। আবেদন সবাই করতে পারে। এ ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলর সিদ্ধান নেবে তার ছাত্রত্ব ফিরে পাবেকি পাবে না। আর কোন অনিয়মের মাধ্যমে কোন কিছু হবে না বলেও জানান তিনি।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মীসভা হয় ২০২০ সালে। তখন সিভি জমা দিই এবং আমার ছাত্রত্ব ছিল। অসুস্থতার জন্য ক্লাস করতে পারিনি তাই সমস্যা হয়েছে। ৯ বছর ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামে সরাসরি যুক্ত আছি।
২০১৮ সালে ভর্তি পরবর্তী ভিন্ন মতের কারণে আমাকে শারিরীক ও মানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ফলে ক্লাস টেষ্ট ও কুইজ টেষ্ট পরিক্ষা লোভাব দিতে পারিনি বিধায় সেমিষ্টার অকৃতকার্য হই, প্রতি হিংসার শিকার হয়ে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর একটানা ৬০ দিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারিনি বিধায় ঐ সময়ের ২০১৯ সেশনে ক্লাস কার্যক্রম, ক্লাস টেস্ট যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ক্লাস টেস্ট এবং কুইজ টেস্ট ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে সকল কোর্সে কৃতকার্য হলে কোর্স প্রাপ্ত হই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে উক্ত কোর্সে অকৃতকার্য হয়ে পুনরায় লেভেল-১ এ থাকতে হয়। কোভিড পরবর্তী ২০২০ সালে লেভেল-১ সেমিষ্টার-১ পুনরায় তৃতীয়বারের মত সব পরীক্ষায় যথাযথ নিয়মে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমি AGEC-109 কোর্সে আবারো অকৃতকার্য হই এবং তৎপরবর্তী মেকাপ পরীক্ষায় আবার অকৃতকার্য দেখানো হয়। বিষয়টি আমার প্রতি বৈসম্যমূলক বলে আমি মনে করছি। পরবর্তীতে গত ০৬-০৩-২০২২ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক বিবেচনায় বিশেষ মেকাপ পরীক্ষার সুযোগ দানের জন্য আবেদন করি। তার মধ্যে রাজনৈতিক সাংগঠনিক পরিচয় প্রাপ্ত হই, সে কারণে তারা রাজনেতিক পরিচয় থাকার কারণে আমাকে বিশেষ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করায় ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। AGEC-109 কোর্সে বার বার অকৃতার্য হওয়ার বিষয়টি আমার প্রতি পরিকল্পিত বৈষম্যমূলক মনে করছি। এভাবে শিক্ষা জীবন ব্যহত হওয়ায় আমার এবং আমার পরিবার সদস্যদের সকল স্বপ্ন আশা বিপন্ন হতে চলেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ১০ মে (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল- কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট শেকৃবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
আহমেদুল কবীর তাপসকে সভাপতি এবং বি.এম. আলমগীর কবীরকে সাধারণ সম্পাদক করে অনুমোদিত এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারিক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সামাদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদিত কমিটিতে আগামী ১৫ দিনের মাঝে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.