চলমান সংকটের মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করলেন কুয়েট ভিসি, শিক্ষকদের আলটিমেটাম মঙ্গলবার পর্যন্ত

খুলনা ব্যুরো: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চলমান সংকটের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হযরত আলী হঠাৎ কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) সকালে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, রবিবার ভিসি তাকে ফোনে ঢাকায় যাওয়ার কথা বললেও কোনো দায়িত্বভার লিখিতভাবে হস্তান্তর করেননি। “যখন জানতে পারি আমাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন, তখন তাকে ফোন দিলে তিনি জানান, রূপসা সেতু পার হচ্ছেন,” বলেন ড. আজাদ।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার (২০ মে) ভিসি খুলনায় ফিরবেন বলে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষক সমিতির দ্বিতীয় দফার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে। শিক্ষকরা ভিসির সাথে দেখা করতে চাইলেও তখন জানতে পারেন, তিনি খুলনায় নেই। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষক সমিতির নেতারা নতুন করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে চাই। শিক্ষকরা ক্লাসে ফেরার জন্য প্রস্তুত। তবে দোষীদের বিচার ও প্রশাসনের দায়বদ্ধতা ছাড়া আমরা শান্ত হতে পারি না।”
তিনি প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে বলেন, “শিক্ষকরা কর্মবিরতির সপ্তম দিন পার করলো, এখন অষ্টম দিনে। তবুও প্রশাসন নিশ্চুপ কেন?”
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত হন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, এই ঘটনায় কোনো কার্যকর তদন্ত বা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ৪ মে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ৫ দফা দাবিতে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রত্যাহার, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও দ্রুত সমস্যা সমাধান।
একই সময় কুয়েটের ১৯ ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে বলেন, চলমান সংকটে তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। “আমাদের দুটি পরীক্ষা আটকে আছে, এক হাজার শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ছে,” বলেন একজন শিক্ষার্থী।
তারা বলেন, “আমরা চাই, দ্রুত ক্লাস শুরু হোক। প্রশাসনের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধ্বংসের পথে।”
তবে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেই বর্তমানে কথা বলতে অনিচ্ছুক। দীর্ঘ তিন মাস ধরে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেননি।
শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাছুদের আমলে গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল না করার পক্ষে। তাদের মতে, নতুন কমিটি গঠিত হলে পুরো প্রক্রিয়া আবার পিছিয়ে যাবে। তারা চান, বর্তমান কমিটিই দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিক।
শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে আবারও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। তার আগেই প্রশাসন দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সদর্থক পদক্ষেপ না নিলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.