বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধে গাজা উপত্যকার প্রধান হাসপাতালের প্রবেশপথে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। চিকিৎসাকর্মীরা বলছেন, জ্বালানির অভাবে হাসপাতালে থাকা নবজাতকসহ রোগীরা মারা যাচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতালের ভেতরে থাকা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা সোমবার বলেছেন, গত তিন দিনে ৩২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে তিন নবজাতক রয়েছে। হাসপাতালে ইসরায়েলের অবরোধ ও বিদ্যুৎ না থাকায় মৃত্যু হয়েছে রোগীদের।
হাসপাতালের ভেতরে এখনও অন্তত ৬৫০ জন রোগী রয়েছেন। রেড ক্রসসহ অপর নিরপেক্ষ সংস্থাগুলো চেষ্টা করছে তাদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
ইসরায়েলের দাবি, আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাস যোদ্ধাদের ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি রয়েছে। তারা বেসামরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হাসপাতালের একজন সার্জন ডা. আহমেদ এল মোখাল্লাতি টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, হাসপাতালের সামনে ট্যাংক রয়েছে। আমরা পুরোপুরি অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। এটি পুরোপুরি বেসামরিক এলাকায়। শুধু হাসপাতালের স্থাপনা, রোগী, চিকিৎসক ও অন্যান্য বেসামরিকরা রয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, তারা পানির ট্যাংকিতে বোমাবর্ষণ করেছে, পানির কূপ ও অক্সিজেন পাম্পও বাদ যায়নি। তারা হাসপাতালের সবকিছুতে বোমাবর্ষণ করছে। আমরা কোনোমতে টিকে আছি। আমরা সবাইকে বলছি, হাসপাতাল রোগীদের চিকিৎসা করার মতো নিরাপদ নয়। রোগীদের এখানে রেখে আমরা ক্ষতি করছি।
গত মাসে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে এই আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দেশটির দাবি, হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার উত্তরাঞ্চল খালি করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশু।
অক্টোবরের শেষ দিকে গাজায় প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনারা। এরপর আল-শিফা হাসপাতাল ঘিরে লড়াই ঘনীভূত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিদরা বলেছেন, হাসপাতালের প্রবেশ পথে অবস্থান করছে ইসরায়েলি ট্যাংক। হাসপাতালে গুলিবর্ষণ করছে ইসরায়েলি স্নাইপার ও ড্রোন। এর ফলে রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের সরিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অবরুদ্ধ এবং একটি মৃত্যুচক্রের ভেতরে রয়েছি।
বেসামরিকদের হাসপাতাল ত্যাগ ও রোগীদের অন্যত্র পাঠাতে চিকিৎসাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। দাবি করেছে, নবজাতক ওয়ার্ড থেকে শিশুদের সরানোর চেষ্টা করেছে তারা এবং ৩০০ লিটার জ্বালানি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হামাস তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিদরা বলেছেন, ৩০০ লিটারে হাসপাতালে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে মাত্র আধা ঘণ্টা। প্রতি দিন হাসপাতালটির প্রয়োজন হয় ৮ থেকে ১০ হাজার লিটার জ্বালানি।
ডা. মোখাল্লাতি বলেছেন, অপরিণত শিশুদের সাধারণত ইনকিউবেটরে রাখা হয়। কিন্তু এখন একটি বিছানায় আটজনকে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিন শিশুর মৃত্যুর পর জীবিত আছে ৩৬ জন। প্রতি দিন আরও শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করছি আমরা। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.