রহমান উজ্জ্বল: লেখার শুরুতেই বলে নেয়া ভালো মানুষের প্রত্যাশার শেষ নাই। প্রত্যাশা অসীম। বিশেষ করে উন্নয়নশীল এবং গরিব দেশগুলোর জনগণের সেদেশের সরকারের প্রতি প্রত্যাশা থাকে আরও অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ক্রমাগত অপশাসন, শোষণ, নির্যাতনের পর একটি চরম ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর পলায়নের পর এদেশের জনগণের প্রত্যাশা সরকারের প্রতি অনেক বেশি থাকবে-এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের সরকার বা তার পরবর্তী সরকারের প্রতি জনগণের যে অতিরিক্ত প্রত্যাশা থাকবে তা সরকারের প্রতি চাপ কি-না? উত্তর হল- অবশ্যই না। কারণ, তারা জেনে- বুঝেই দায়িত্ব নিয়েছে। কেউ কেউ বলতে গেলে অতি উৎসাহী হয়ে দায়িত্ব নিয়েছে। রক্ত স্রোতের উপর দিয়ে হেঁটে তারা শপথ নিয়েছে। তাদেরকে কোনভাবেই ব্যর্থ হলে চলবে না। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা গোষ্ঠীর ক্রমাগত চক্রান্ত এ কথাই প্রমাণ করে, এখানে বিন্দুমাত্র ব্যর্থতার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই। মোদ্দাকথা হলো, জনগণের সহায়তায় সরকারকে সফল হতে হবে এবং তা জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশে কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে কি? সত্য উচ্চারণ হলো, চোখে পড়ার মত তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং আরো অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা না বললেই নয়।
হ্যাঁ, আমরা জনগণ জানি- পতিত হাসিনার রেখে যাওয়া দলছুট কিছু লোক এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নগ্ন চক্রান্ত জাতি এবং সরকারকে বারবার বিব্রত করছে। সেক্ষেত্রে সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক রোল প্লে করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ম্রিয়মান। সরকার তার কর্মকাণ্ড দ্বারা জনগণকে বুঝাতে পারে নাই -তারা একটি রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের ফসল।
ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতির পালসকে সম্ভবত সরকার সঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পারে নাই। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিহাসের সেইসব শাসকগোষ্ঠীর একটি, যে সরকারের পেছনে সব পথ ও মত এক হয়ে একটি মোহনায় মিলিত হয়। তা শুধুমাত্র দেশের মঙ্গলের জন্য।
শেখ হাসিনার পলায়ানের পর দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা ছিল, একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা। যত দ্রুত সম্ভব দেশের আইন- শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটানো, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুনর্গঠন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বলা যেতে পারে সফল হয়নি। বরং দেশের নাগরিকরাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নাগরিকদের সচেতনতার কারণেই অত্যাচারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর লোকজন ব্যাপক প্রাণহানি থেকে রক্ষা পায়। এক্ষেত্রে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বি এন পি থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
যদিও পরাজিত আওয়ামী গোষ্ঠী সরকার পতনের পর দেশে কয়েক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হবে বলে যে অপপ্রচার চালিয়েছে, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা সেই অপপ্রচার রুখে দিয়েছে। ধৈর্য এবং অসাম্প্রদায়িকতার এক নতুন বাংলাদেশ দেখেছে বিশ্ব। বহুবার, বহু রকমের উস্কানি সত্ত্বেও নাগরিকরা সচেতন থেকে তা মোকাবেলা করেছে। অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো দুই/একটি মভ জাস্টিস যে হয়নি- এটা বললে সত্যের অপলাপ হবে। কিন্ত প্রায় দুই হাজার লোকের প্রাণহানি এবং প্রায় ৩০ হাজার লোকের পঙ্গুত্ব বরণের মাধ্যমে একটি দানব সরকারের পতনের পর সেটাকে খুব বেশি বলা যাবে না। যদিও কোন অনাকাঙ্খীত মৃত্যু বা রক্তপাতই কাম্য নয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে-একটি রক্তাক্ত সফল বিদ্রোহ ও বিপ্লবের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো রক্ত, লাশ, অগ্নিকাণ্ড বা ধ্বংসের মতো দানবীয় বিষয়গুলো।
৫ তারিখে শেখ হাসিনার পলায়ানের পর বাংলাদেশ বলতে গেলে তিন দিন সরকারবিহীন অবস্থায় ছিল। ৮ তারিখে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস বিদেশ থেকে ফিরে এলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রথম দিক থেকে নাগরিকদের একটি অংশের মধ্যে এই সরকার নিয়ে বিতর্ক ও হতাশা ছিল। দেশের জনগণের একটি বড় অংশের কাছে উপদেষ্টা পরিষদ মনপূত না হলেও তারা মেনে নেয় তা দেশের স্বার্থে। নাগরিকরা বারবার অশান্তি ও রক্তপাত দেখতে চায়নি। যেজন্য দেশের মানুষ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসন কর্তৃক পরাজিত গোষ্ঠীর আশ্রয়দানকে ভালোভাবে না নিলেও তা নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু পরবর্তীতে আশ্রিতদের বিষয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয় তা সরকারের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদেরকে আইনের কাছে সোপর্দ করাই ছিল সময়োপযোগী সঠিক কাজ। কিন্তু নাগরিকরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে, প্রশাসন খুব একটা বদলায়নি। হাসিনা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী রেজিমকে রক্ষা করতেই যেন ব্যস্ত। দেশের সব ধরনের মিডিয়া এবং নাগরিকরা বলাবলি করতে থাকে, আওয়ামী গোষ্ঠী ও দুর্বৃত্ত রাজকর্মচারীদের পলায়নে প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীর জড়িত থাকার কথা। পরে অবশ্য এ তালিকায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায়ের নাম উচ্চারিত হয়।
সরকার গঠনের মুহূর্ত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত ছিল আন্দোলনে আহতদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। ভঙ্গুর আইন প্রয়োগকারী বাহিনী বা সংস্থাগুলোকে সংস্কার করে অথবা প্রয়োজনে বদলে ফেলে আইনশৃঙ্খলার খুব দ্রুত উন্নয়ন ঘটানো। সত্যিকারের বাজার মনিটরিং করে বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পুরনো ও নতুন সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে ফেলে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ করা। এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনার অভাব লক্ষ্য করা যায়। আন্দোলনের স্টেক হোল্ডারদের সাথে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়।
আন্দোলনের মূল স্টেক হোল্ডার নিহতদের পরিবার, চিকিৎসাধীন অথবা পঙ্গুত্ব বরণকারীদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা জাতিকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এটা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। শত শত আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার ছাত্র নিহত এবং হাজার হাজার আহত হলেও এটাকে হাইড রাখতে পুরনো শকুনরা এখনো তৎপর। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসের পিয়ন পর্যন্ত বেশিরভাগই পুরনো ছাত্রলীগ কর্মী অথবা আওয়ামী পা চাটা সুবিধাভোগীরা। সঙ্গত কারণেই ক্ষেত্রবিশেষে তাদের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা আচরণ লক্ষ্য করা যায় ।
মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে শেখ মুজিব একাই মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জনগণের মাঝে এরকম একটা নেরেটিভ চালু করেছিল আওয়ামী লীগ। ২৪ এর প্রবল রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরও এ রকম একটা হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। ছাত্রদের মধ্যে নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা শেষ পর্যন্ত আর শালীনতার মধ্যে থাকেনি। কোথাও কোথাও তা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। এত বড় একটা বিপ্লবের পর ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের এ ধরনের আচরণ জাতিকে অত্যন্ত ব্যথিত করে।
দেশের এই ক্রান্তিকালে নাগরিক ও রাজনৈতিক দলসমূহ প্রচন্ড ধৈর্য ও উদারতার পরিচয় দিয়েছে। দেশী-বিদেশি উস্কানি ও চক্রান্তে জড়ানো থেকে তারা জনগণকে বিরত রাখতে পেরেছে। এদেশের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সহযিয়া সমাজ ব্যবস্থাকে নতুন করে বিশ্বের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটাও সত্যি যে, বিপ্লবী চেতনা মানুষের মনোজগতকে শানিত করলেও চরিত্রের মধ্যে এটাকে ধারণ করতে নাগরিকরা ব্যর্থ হয়েছে। নতুন-পুরানোরা মিলে এখনো সিন্ডিকেট করে মানুষকে জ্বালাতন করছে মারছে। এখনো থেমে নেই কোন সরকারি অফিসে ঘুষ- দুর্নীতি। পাল্টেনি তাদের আচরণ। আর বর্ণচোরারা পুরনো লেবাস পাল্টে ফেলে হয়ে উঠেছে দেশপ্রেমীক।
এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে আমরা সংস্কার করছি। আমাদের সময় প্রয়োজন। অন্যদিকে নাগরিকদের পক্ষ থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে বলছে- আপনারা সংস্কার করুন অসুবিধা নাই। কিন্তু আগে আমাদের দুবেলা খেয়ে পড়ে বাঁচতে দিন। এই যে বৈপরীত্য, দ্রব্যমূল্যের দানব হয়ে ওঠা -এটা অদৃশ্য এক দেয়াল তৈরি করছে সরকার ও নাগরিকদের মাঝে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দেশ এবং কারোর জন্যই তা মঙ্গলজনক হবে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি আমাদের সংস্কারের কোন প্রয়োজন নাই। অবশ্যই প্রয়োজন আছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দর্শন ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের নামে যদি সরকার দেশের নাগরিকদের খাদ্য ও শান্তি শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা ঠিক রাখতে না পারে তাহলে তো নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থেকে অসন্তোষ তৈরি হবেই। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে। রাষ্ট্র পরিচালানোর জন্য পাঁচ মাস সময় কি খুব বেশি বা কম সময়? জনগণ দ্বারা নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য পাঁচ মাস খুব বেশি সময় নয়। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ের সরকারের জন্য পাঁচ মাস অনেক দীর্ঘ সময়।
সিন্দাবাদের ভুতের মত চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শাসককে হটানোর পর দেশের জন্য সংস্কার অবশ্যই অতীব জরুরী। কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি হলো দেশের মানুষের খাদ্যদ্রব্য ও শান্তি- শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। যেহেতু এটি জনগন দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার-সেহেতু এ সরকারের অতি জরুরি বিষয়গুলোতেই মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। জরুরী না হলে সংস্কারের নামে শাসনকার্যে কালক্ষেপণ করা দেশের নাগরিকরা ভালোভাবে নিতে নাও পারে। কারণ,এদেশের মানুষের এ বিষয়ে অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।
পুরনো আমলা ও সরকারি কর্মচারী এবং বেশিরভাগ অনভিজ্ঞ উপদেষ্টারদের দিয়ে সব ক্ষেত্রে সফলতার আশা করাটাও হবে বোকামি। তিতা হলেও সত্যি, ইউনুস সরকারে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাগরিকদের অংশগ্রহণ খুব একটা দেখা যায়নি। দুই/একজন পরিচিত মুখ যারা আছেন- তাদের নিয়েও জনগণের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায়।
দেশের মানুষ চায় পূর্বেকার সরকারগুলোর মত লোক দেখানো কোন আয়োজন না হোক। ভাত- কাপড়ের নিশ্চয়তা, শান্তি-শৃঙ্খলার উন্নতি, বলিষ্ঠ- স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, ভোটের অধিকার- এগুলোই মূলত সাধারন মানুষের চাওয়া। পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা এবং জুলাই আগস্টের স্পিরিটকে জাগ্রত রাখাটাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোতে একটি সুশৃংখল পুলিশ বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। বিপ্লবের পাঁচ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয়নি। পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনীর লোকজন এখনো ঘুষ- দুর্নীতির সাথে ব্যাপকভাবে যুক্ত। এখনো সরকারি অফিসের লোক সাধারণ নাগরিকদের সাথে ফিওডাল লর্ডের মত আচরণ করে। অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না ?
এতদিন হয়ে গেল, ঢেলে সাজানো যায়নি বা হয়নি ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা কাঠামো। পুলিশ- আনসারের বহু সদস্য এখনো পলাতক আছে। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর বড় একটা অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এমতবস্থায় খুবই দ্রুত গতিতে সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল। আওয়ামী লীগ কোঠায় সুযোগ পাওয়া পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন ছিল। অথচ দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ -যুবক চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে।
প্রায় ২৫০ বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া যেকোনো দেশের জন্য একটি বড় আঘাত। সেখানে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ টিকে আছে দেড় কোটি প্রবাসীর রেমিটেন্সের টাকায়। সরকার প্রবাসীদের এয়ারপোর্টে ফুল দিয়ে বরণ করছে। কিন্তু সরকার আদম ব্যবসায়ী বা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে প্রবাসীদের মুক্ত করছে না ।যেখানে ভারত, পাকিস্তান ,নেপাল, শ্রীলঙ্কায -এসব দেশ থেকে বিদেশে লোক যাচ্ছে ৮০/৯০ হাজার টাকায় সেখানে আমাদের দেশ থেকে যেতে লাগছে পাঁচ/ ছয় লাখ টাকা। রিক্রুটিং এজেনসীগুলোর এই ডাকাতি বন্ধ করতে পারলে আরো অনেক বেশি লোক বিদেশে যেতে পারতো। আয় হতো বিদশী রেমিটেন্স।
দেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি খাতের একটি হল গার্মেন্টস। এদিকে গার্মেন্টস নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শেষ নেই।দেশের ফোকলা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে গার্মেন্ট সেক্টরের প্রতি আরো সতর্ক এবং দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। মালিক এবং শ্রমিক উভয়পক্ষকে আরো সচেতন থাকতে হবে। সরকারকে আরো সচেতন ও সংবেদনশীল থেকে যারা গার্মেন্টস সেক্টরে নাশকতার চেষ্টা করছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
যারা দেশে জেনোসাইড ঘটানোর মূল পরিকল্পনাকারী তারা কিভাবে দেশ থেকে পালিয়ে যায়- এটা সরকারের কাছে জনগণের একটি বড় প্রশ্ন। আওয়ামীলীগের মধ্যে যারা মামলার আসামি তাদের মোট কতজনকে আটক করা হয়েছে- এ নিয়েও নাগরিকদের মধ্যে হতাশা আছে। পক্ষান্তরে মামলা বাণিজ্যের কথা উঠছে। যারা প্রকৃতপক্ষে দোষী নয় , তাদেরকে কোনভাবে যেন হেনস্তা না করা হয়- এসব বিষয়েও সরকারের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিরোধী মতের মানুষের উপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানো হয়। খুন, গুম, হামলার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মামলা দায়ের করা হয় তাদের প্রতি। পুলিশী অত্যাচারে ভিন্ন ভিন্ন দলের তরুণ- যুবক কর্মীরা বন -বাদাড়ে, বিলের পাশে, চরে, নদীতে নৌকায় বা নিজ এলাকা ছেড়ে ভিন্ন কোন স্থানে আত্মগোপন করে থাকে। লক্ষ লক্ষ পরিবার এ সময় আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ভিকটিমকে পাওয়া না গেলে তার বৃদ্ধ বাবা- মা ,ভাই, বউ কিমবা শিশু সন্তানকেও তুলে নিয়ে যেতে দেখা যেত। এসব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যসহ, জুলাই আগস্টে দায়িত্ব পালনকারি অতি উৎসাহী -নিষ্ঠুর পুলিশ বা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা বা সেটা দেখতে পাওয়া এদেশের আপামর জনতার হৃদয়ের আর্তি। সেই সাথে অসাধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা ভিত্তিহীন মামলাগুলো সরকার নিজ থেকে দ্রুত সমাধান করলে জনগণের ভুয়সী প্রশংসা পেত।
আগেই বলেছি, মানুষের প্রত্যাশা অসীম। সবগুলো মেটানো সম্ভবও না। আর সব কাজ একসাথে করলে হয়তো কিছুই ভালোভাবে সমাধান হবে না। তাই জরুরী এবং বিষয়ভিত্তিক কাজগুলো চিহ্নিত করুন এবং সঠিক পরিকল্পনা করে আগে সেগুলোই সমাধান করুন। জাতি আপনাদের হাতে সবাই মিলে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। তাই আপনাদের ব্যর্থতা মানে জাতির ব্যর্থতা। এখানে ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশে-বিদেশি শিয়াল শকুনেরা যতই চক্রান্ত করুক ।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও শীতকাল- এই সুযোগে দেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চুরি- ডাকাতি বেশি হচ্ছে। একটা গরু হারালে কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙে যায়। এগুলোই সুযোগ। ছোট ছোট সুযোগগুলোকে কাজে লাগান। মানুষের পাশে দাঁড়ান। আইন ও দেশের প্রতি আপনার আনুগত্য ও সত্যনিষ্ঠা হয়তো ভুলিয়ে দিতে পারে আপনার অতীত কুকীর্তি। বুলেটের বদলে গোলাপ হাতে নাগরিকদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকুন। দেখবেন, একদিন তারাও আপনাকে বুকে তুলে নিবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি লুৎফর রহমান উজ্জল। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.