খুলনায় ফিল্মি কায়দায় অপহরণ, মুক্তিপণের ফাঁদে ধরা পড়লো সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা!

খুলনা ব্যুরো: একদিকে গভীর রাত, অন্যদিকে দরজা খোলার শব্দ। খুলনার লবণচরা এলাকার এক বাসা তখন যেন সিনেমার সেট। অথচ ঘটনাটা বাস্তব—একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে কোটি টাকার মুক্তিপণ দাবি, আর সেই মুক্তিপণের টাকাই হয়ে দাঁড়ায় ফাঁদ, যেখানে ধরা পড়ে একে একে এক সাংবাদিক, এক বিএনপি নেতা ও এক ছাত্রনেতা।
অপহৃত ব্যবসায়ী নুর আলম (৫৬) গাজীপুরের শ্রীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে বসবাস করতেন খুলনার দরগা রোডে। তাকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে একটি চক্র, যারা নিজেদের ‘উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় কাজ করা লোক’ বলে পরিচয় দেয়।
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্য মতে, ব্যবসায়ীর ছেলের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপে আসে ভয়ভীতিমূলক অডিও বার্তা। সেখানে বলা হয় আমি একের কথা বলছিলাম… এটা আমি ঘটাইনি, বোঝো তো কারো সিদ্ধান্তে হচ্ছে। ঢাকার লোকজন জড়িত। একের নিচে কিছু হবে না। ফিফটি দিতে হবে।”
পুরো কথোপকথনের দৈর্ঘ্য প্রায় সাত মিনিট। স্পষ্ট হয়—এটি কোনো তাৎক্ষণিক অপরাধ নয়, বরং সুপরিকল্পিত একটি অপহরণ-চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট।
ব্যবসায়ীর পরিবার মুক্তিপণের ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়ে চক্রটিকে ফাঁদে ফেলে। শনিবার দিবাগত রাতে যখন ওই টাকা নিতে আসে তিনজন ব্যক্তি, তখন আশপাশে প্রস্তুত ছিল ডিবি পুলিশ। হাতেনাতে ধরা পড়ে তারা। এরপর শুরু হয় নাটকীয় উদ্ধার অভিযান, যেখানে অপহৃত ব্যবসায়ীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে পরিচিত মুখ।
খুলনার স্থানীয় দৈনিক ‘প্রবর্তন’-এর নির্বাহী সম্পাদক  জিয়াউস সাদাত,খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নগর যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি  মাহবুব হাসান পিয়ারু, জাতীয় নাগরিক  কমিটির নেতা ইমন মোল্লা।
এই তিনজনের মধ্যে কেউ সাংবাদিক, কেউ রাজনীতিক, আবার কেউ ছাত্রনেতা—তারা সবাই একই অপরাধে যুক্ত, এমন ঘটনায় বিস্মিত নগরবাসী।
ডিবি ওসি মো. তৈমুর ইসলাম জানান, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় চক্রটির অন্তত ৩০ জন সদস্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে ঢাকার কিছু লোকও জড়িত বলে ধারণা। গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল কললিস্ট বিশ্লেষণ করে চক্রের বাকি সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনা শুধু একটি অপহরণ নয়; এটি একটি উদাহরণ—কীভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত মুখগুলোই কখনো কখনো অপরাধের ছদ্মবেশে নিজেদের আসল রূপ দেখায়। সেটিও প্রমাণ হলো এই ফাঁদ ও উদ্ধার অভিযানে।সমাজের মুখোশ খোলে দিলো এই রাত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.