খুলনাব্যুরো: দেশে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। নতুন ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি জোরদারের নির্দেশ দিলেও খুলনায় করোনা শনাক্ত কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে জটিলতা। মূলত নমুনা পরীক্ষার কিট সংকট এবং আরটি-পিসিআর ল্যাব অকার্যকর থাকায় ব্যাহত হচ্ছে দ্রুত শনাক্তের প্রক্রিয়া।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) আরটি-পিসিআর ল্যাব বিগত সময়ে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। বর্তমানে মেশিনটি পুনরায় চালুর জন্য ক্যালিব্রেশন ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির কাজ জরুরি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
খুমেকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “আরটি-পিসিআর চালুর জন্য প্রয়োজনীয় রিকোয়ারমেন্ট পাঠানো হয়েছে। মেশিন ক্যালিব্রেট করা ও সেটআপ প্রস্তুত হলেই চালু করা সম্ভব।”
তবে আপাতত নতুন করে টেকনিশিয়ান নিয়োগের প্রয়োজন নেই জানিয়ে খুমেক হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন ও আরএমও ডা. খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, “হাসপাতাল ও কলেজের বিদ্যমান জনবল দিয়েই প্রাথমিকভাবে পিসিআর মেশিন পরিচালনা করা সম্ভব। রোগী বাড়লে টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন হবে।”
গত শনিবার (১৩ জুন) থেকে খুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ছয়জনের পরীক্ষা করে সবার ফল নেগেটিভ এসেছে। তবে হাসপাতালে আগে থেকে থাকা মাত্র ৭৫টি কিট দিয়েই এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৬৯টি কিট অবশিষ্ট রয়েছে।
ডা. ইশতিয়াক বলেন, “আমরা আমাদের মজুদ কিট দিয়েই কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে নতুন চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন হাসপাতালে মজুদ থাকা কিট দিয়েই আপাতত র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আরটি-পিসিআর মেশিন সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “আজ রবিবার (১৫ জুন)থেকে করোনা সংক্রান্ত বিভাগীয় রিপোর্ট তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ২–৩ দিনের মধ্যে গণমাধ্যমে প্রতিদিনের আপডেট সরবরাহ সম্ভব হবে।”
খুমেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ৪০টি আইসোলেশন বেড এবং ১০টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত ৯ জুন থেকে এই প্রস্তুতি থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনও করোনা রোগী ভর্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে খুলনায় দ্রুত পূর্ণ সক্ষমতা সম্পন্ন পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। শুধু র্যাপিড টেস্ট নির্ভরতা না রেখে আরটি-পিসিআর চালু করতে হবে এবং কিট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
তাদের মতে, “নতুন ঢেউ শুরু হলে রোগী শনাক্তের গতি ও নির্ভুলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুলনা অঞ্চলে আরটি-পিসিআর ল্যাব দ্রুত চালু না হলে রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।”
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.