বিটিসিআন্তর্জাতিকডেস্ক: কাবুল পার্কে সপরিবারে অবস্থান নেওয়া একজন গৃহবধূ জাহিদা বিবি। মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে ‘টগবগে সূর্য’। জাহিদা বললেন, ‘আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে। খুবই খারাপ লাগছে। আমার পেটে কিছু নেই। মনে হয় একটু পরই মারা যাব।’
তালেবানরা কাবুল দখলের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। শত শত আফগান পরিবার যারা কাবুল পার্কে গরমের মধ্যে অস্থায়ী শিবির বানিয়েছে, খাদ্যের জন্য ভিক্ষায় নেমেছে তারা।
এই পরিবারগুলোর কাছে নগদ কোনো অর্থ নেই যে তারা বাড়ি ফিরে যাবে। শুক্রবার এক সরেজমিন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।
ঠিক যে সময়টায় দেশত্যাগের জন্য বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছে হাজার হাজার মানুষ, ওই সময়ে অনেকটা নিরুপায় হয়ে প্রাণের মায়া ছেড়ে দিয়েছে বাস্তুচ্যুত এসব আফগান পরিবার। তারা পালানোর চেষ্টা না করলেও নিজেদের বাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে করেনি। আর নিরাপত্তাহীনতার কারণেই বাড়িঘর ছেড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে পার্ক কিংবা এ রকম কয়েকটি জায়গায়। যদিও এখানে নিরাপদ কি-না, তা তারা জানেন না।
উত্তর আফগানিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত আহমেদ ওয়াসিম জানান, পার্কে যারা আছেন তারা আশা করছেন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতি দয়া করবে, মনোযোগ দেবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি খোলা মাঠে প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পাচ্ছি।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা পার্ক এবং বিমানবন্দরে অবস্থানরত জনগণকে খাবার সরবরাহ করতে নারাজ।
মুখপাত্র বলেন, ‘কারণ, এটি আরও বেশি জনসমাগম ঘটাবে। তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত।’
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ আফগান বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
উত্তর আফগানিস্তানের ফালওয়ান সমির জানান, তার নিজ শহরে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় তার পরিবার কাবুলে এসেছিল।
তিনি বলেন, ‘সেখানে তুমুল যুদ্ধ এবং বোমা হামলাও হয়েছিল। এজন্য আমরা এখানে এসেছি। আমাদের ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের থাকার আর কোনো জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে বাড়ি ফেরার টাকাও তো নেই।’
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, দেশটিকে তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য সহায়তার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে সাহায্যের প্রয়োজন এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি সমস্ত আফগান শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
তালেবান অবশ্য জাতিসংঘকে আশ্বস্ত করেছে যে মানবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে যদি বিদেশি সরকারগুলো তালেবান শাসনকে সমর্থন করে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.