কুয়েট সংকট: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসনের নমনীয়তা, বহিষ্কার প্রত্যাহার ও হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত

খুলনা ব্যুরো: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) চলমান ছাত্র আন্দোলনের মুখে আজ বুধবার বিকেলে ১০২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং সাতটি আবাসিক হল আজ বিকেল থেকেই খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্বঘোষিত ২ মে’র পরিবর্তে হলগুলো আজ থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে এবং পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হবে।
আন্দোলনের পটভূমি
২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে** ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য সব আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়া ও প্রশাসনের ‘একপাক্ষিক’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে।
১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে। ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা ছেলেদের ছয়টি আবাসিক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করে এবং ১৬ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এরপর ২২ এপ্রিল ৩২ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। ইতোমধ্যে ৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত
১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং ২ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু আন্দোলনের চাপ ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আজকের (২৩ এপ্রিল) ১০২তম সিন্ডিকেট সভায় সেই বহিষ্কারাদেশ পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং আজ থেকেই হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও শিক্ষার্থী-প্রশাসন সংলাপ
আজ সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রেখে অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন প্রত্যাহার নয়’ বলে জানায়।
একইদিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল, যেখানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তনজিমউদ্দীন খান, বুয়েটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আহমেদ শিবলী, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিস্তারিত বৈঠক করেন। শিক্ষার্থীরা বৈঠকে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, প্রশাসনের ভূমিকা এবং সহিংসতার অভিযোগ।তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে জানান, তদন্তের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
দুই মেরুতে অবস্থান: শিক্ষক-কর্মচারী বনাম শিক্ষার্থী
আজ দুপুরে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভিসির অপসারণের বিরোধিতা করে। বিকেলে কর্মচারী সমিতি উপাচার্যের সমর্থনে মানববন্ধন করে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল চালিয়ে যায়।
কুয়েট প্রশাসনের আজকের সিদ্ধান্ত আন্দোলন প্রশমনের দিকে একটি ধাপ হলেও মূল দাবি—ভিসির পদত্যাগ—অবসান হয়নি, বরং তা আরও জোরালো হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.