কুয়েটে টানা ২৭ ঘণ্টার আমরণ অনশন, ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ — অনড় আন্দোলনকারীরা, তদন্ত কমিটিতে অনাস্থা

খুলনা ব্যুরো: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আমরণ অনশন মঙ্গলবার টানা ২৭ ঘণ্টা পার করেছে। ইতোমধ্যে চারজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে। একজন শিক্ষার্থী মায়ের অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে ২৭ জন শিক্ষার্থী অনশন অব্যাহত রেখেছেন।
গ্রীষ্মের দাবদাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, খুলনার তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় অনশন চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বান: মানবিকতা বিবেচনায় অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি. আর. আবরার অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই প্রচণ্ড গরমে শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। আপনাদের শিক্ষা জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে অনশন থেকে ফিরে আসুন।”
তিনি আরও জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অবহিত এবং দ্রুত পরিস্থিতি সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল কুয়েট পরিদর্শনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের খবরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তবে
শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি চাই না, সরাসরি ভিসির অপসারণ চাই। এটি একমাত্র দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।” তারা অভিযোগ করেন, “তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চলছে, যা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি অসম্মান।”
তালাবদ্ধ রোকেয়া হল দখলে নিল ছাত্রীরা
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকা কুয়েটের একমাত্র ছাত্রী আবাসিক হল ‘রোকেয়া হল’-এর তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন কয়েকজন ছাত্রী। তাদের সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রও ছিলেন যারা তালা ভাঙতে সহায়তা করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, আরও অনেকে আজ-কালকের মধ্যে হলে ফিরে আসবেন।
এর আগে ১৫ এপ্রিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অন্যান্য ছাত্র হলগুলোর তালা ভেঙে পুনরায় হলে প্রবেশ করেন।
প্রশাসনের অনুরোধে কর্ণপাত নেই
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তারা জুস খাওয়ানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকেন।
উল্লেখ্য, আন্দোলনকারীদের দাবি, কুয়েটের উপাচার্যের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ সোমবার ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে আমরণ অনশন শুরু করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.