কুমিল্লার তিতাসে কাঠের সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থীসহ বয়স্ক নারী-পুরুষের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

কুমিল্লা ব্যুরো: কুমিল্লার তিতাসে প্রথম ও দ্বিতীয় স্বরসতির চর গ্রাম গড়ে উঠার প্রায় ২শত বছর অতিবাহিত হলেও দুইগ্রামের মাঝে বিরাজমান খালের উপর কোন সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে কাঠের সাঁকোর মাধ্যমে উভয়প্রান্তের দুই উপজেলার ৯ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় প্রায়ই শিক্ষার্থী ও বয়ষ্ক নারী-পুরুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার সাতানী ইউনিয়নের প্রথম স্বরসতীর চরের দক্ষিণ প্রান্তের কাঠালিয়া নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে একটি খাল সাতানি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় দিয়ে পুনরায় কাঠালিয়া নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় স্বরসতির চরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। উক্ত খালের উপর প্রায় ২০ বছর আগে নির্মিত একটি কাঠের সাঁকো দিয়ে তিতাসের প্রথম স্বরসতিরচরসহ কাঠালিয়া নদীর অপরপ্রান্তে থাকা মেঘনা উপজেলার কাশিপুর, কাঠালিয়া, চর কাঠালিয়া, লক্ষণখোলা, সেনের চর, রাধানগর, পায়রাবন্ধ, ব্রাহ্মণচরের লোকজন নদী পার হয়ে সাঁকো ব্যবহার করে জেলা শহর কুমিল্লা ও উপজেলা সদরসহ বৃহত্তর বাজার বাতাকান্দিতে যাতায়াত করে।
প্রায় ২০ বছর আগে তৎকালিন সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান এইচএম সালাহউদ্দিনের উদ্যোগে খালটিতে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এর আগে বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন পারাপার হতো।
বর্তমানে কাঠের সাঁকোটি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। লোকজন চলাচলের সময় সাঁকোটি নড়াচড়া করে। ঝুঁকি নিয়েই এপথের লোকজনদের সাঁকোটি পারাপার হচ্ছে। দীর্ঘ ২০ বছরে ৪জন ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করলেও আঞ্চলিকতার তকমা দিয়ে কেউ এখানে সেতু নির্মাণে এগিয়ে আসেনি।
প্রথম স্বরসতীর চর গ্রামের দ্বিতীয় স্বরসতীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, স্কুলে যাওয়ার পথে সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকি কখন যেন সাঁকো থেকে পড়ে যাই। একই গ্রামের ইউনিয়ন কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. ইয়ামিন বলেন, সাঁকো দিয়ে যাওয়ার সময় সাঁকো নড়ে। আমাদের গ্রামের অনেকে সাঁকো পার হওয়ার ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না।
প্রথম স্বরসতীর চরের প্রায় ৭০ বছর বয়সী মো. মজিবুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, এই গ্রামের প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রায় ২০০ বছরেও বেশি সময় আগে। কিন্তু উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি আমাদের গ্রামে। সরকার বদল হয়েছে অনেকবার কিন্তু আমাদের ভাগ্য বদল হয়নি। এই স্থানে নির্মাণ হয়নি কোন পাকা সেতু। এতে করে আমাদের ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছেই না। এ সাঁকো দিয়ে আমাদের দুই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী মেঘনা উপজেলার সাত গ্রামের লোকজন যাতায়াত করে। আমার জীবন দশায় আমি পাকা সেতু দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না।
দ্বিতীয় স্বরসতীর চরের কৃষক মোবারক হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রথম স্বরসতির চরের জমিতে এ বছর আমি ২০ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও আলু চাষ করেছি। জমিতে সার নিতে অনেক কষ্ট হয়। লেবার দিয়ে নিতে হয় এতে খরচ অনেক বেশি। বিশেষ করে অনেক সময় লেবারও পাওয়া যায় না। আর যখন ফসল আনার সময় হয় তখন তো কষ্ট আরো বেড়ে যায়। লেবার খরচের কারনে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।
দ্বিতীয় স্বরসতীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, খালের উপর কাঠের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা রয়েছে। প্রতিবছর গ্রামবাসীর উদ্যোগে এটা সংস্কার করা হয়। এই সাঁকো দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আসতে ভয় পায়, আমরা প্রায়ই নিজেরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের পার করে দিয়ে আসি। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের দিয়ে যায়। অনেক সময় এই সাঁকোটি পার হতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছে। আমি দ্রুত উক্ত স্থানে পাকা সেতু নির্মাণের সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মনচরের মো. আবু হানিফ মিয়া বিটিসি নিউজকে জানান, সময় ও খরচ বাচাতে আমরা প্রায় ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে আসছি। তবে সাঁকো দিয়ে মালামাল আনা যায় না, সেক্ষেত্রে আমরা মোহনপুর ঘাট হয়ে এপাড়ে আসি। এক্ষেত্রে আমাদের অতিরিক্ত খরচ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।
সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক সরকার মুঠোফোনে বিটিসি নিউজকে জানান, আমি প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে উক্ত স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। হচ্ছে-হবে বলে বারবার আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত আর এটি অনুমোদন হয়নি। শুনেছিলাম বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাকি এটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করবে। তাই আমি আর প্রস্তাব দেয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় স্বরসতীর চরের মাঝখানের খালের উপর যেখানে কাঠের সাঁকো রয়েছে সেখানেই ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি পাকা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাব এবং সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান আব্দুল্লাহ আল মানছুর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.