বিশেষ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: কালীপুরে ছোট তরফের উৎপত্তি: পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কালীপুর জমিদারির স্বত্বাধিকারী গঙ্গানারায়ণ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে গৌরীদেবী জামালপুর জেলার মহিরামকুল গ্রামে অর্থাৎ বাবার বাড়ির কাছে বসবাস করতেন।
গৌরীদেবীর তিন ছেলে- শ্রীকান্ত, কমলাকান্ত, উমাকান্ত, কালীপুরের তিনটি তরফের প্রতিষ্ঠাতা। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গঙ্গানারায়ণ চৌধুরীর দত্তক ছেলে ও কালীপুরের জমিদার প্রয়াত হরনাথ চৌধুরী ও তার বিধবা স্ত্রী গঙ্গা দেবীর মৃত্যুর পর তাদের অসিদ্ধ দত্তক পুত্র (কৃষ্ণনাথ চৌধুরী) এর বিরুদ্ধে প্রয়াত হরনাথ চৌধুরীর ভাগ্নে উমাকান্ত লাহিড়ি (গং) বাদী হয়ে বাংলা ১২৩৬ (ইংরেজি ১৮২৯) সালে আদালতের রায়ে সম্পত্তির অধিকার লাভ করে ‘লাহিড়ি’ উপাধির নামের শেষে কালীপুর জমিদারির ‘চৌধুরী’ উপাধি নিয়ে কালীপুরে মামারবাড়িতে উপস্থিত হন।
শ্রীকান্ত, কমলাকান্ত ও উমাকান্ত মহিরামকুলে আগে থেকেই পৃথক ছিলেন। সুতরাং পরগণা ময়মনসিংহ (মোমেনসিং), জাফরশাহী (জামালপুর), শেলবর্ষ (বগুড়া) ও ছিন্দাবাজু (বগুড়া) এই চার পরগনার প্রত্যেকটি চার ভাগের এক অংশ করে অর্থাৎ মোট জমিদারির চার আনা বা ৮০ গন্ডা অংশ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক অংশ ২৬.৬৭ গন্ডা, অর্থাৎ ২৬ গন্ডা, ২ কড়া, ২ ক্রান্তি করে পান। কালীপুরে তাদের পৃথক পৃথক বাসভবন নির্মিত হয়েছিল।
ভাইদের মধ্যে শ্রীকান্ত বড়, কমলাকান্ত মধ্যম ও উমাকান্ত কনিষ্ঠ ছিলেন বলে তাদের বাসসথান যথাক্রমে বড় তরফ, মধ্যম তরফ ও ছোট তরফ নামে পরিচিতি পায়। তাছাড়া এর পর থেকে কালীপুরের প্রত্যেক জমিদারের নামের শেষে ‘কান্ত লাহিড়ী চৌধুরী’ এই তিনটি শব্দ যুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে,অসিদ্ধ দত্তক পুত্র কৃষ্ণনাথ চৌধুরী ছিলেন গৌরীপুরের জমিদার ও নবাব সিরাজের পুত্র যুগলকিশোর রায় চৌধুরীর দ্বিতীয় তরফের সন্তান ও তার পূর্ব নাম ছিল প্রাণকিশোর রায় চৌধুরী। পরবর্তীতে সিলেটে যুগলকিশোরের ২য় জমিদারবাড়িতে তার নাম হয় প্রাণকৃষ্ণনাথ রায় চৌধুরী। তখন গৌরীপুর জমিদারবাড়ির স্বত্বাধিকারী ছিলেন যুগলকিশোরের বড় ছেলে হরকিশোর রায় চৌধুরী।
কালীপুর ছোটতরফের প্রতিষ্ঠাতা উমাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী: কালীপুর ছোট তরফের প্রতিষ্ঠাতা উমাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী নদীয়া জেলার অন্তর্গত কুমারখালি গ্রাম নিবাসী প্রাণকৃষ্ণ মৈত্রের কন্যা বিমলা দেবীকে বিয়ে করেন। উমাকান্ত লাহিড়ি সম্বন্ধে জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায় চৌধুরীর উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে, “তিনি পারস্য ভাষায় অভিজ্ঞ ছিলেন। গঙ্গাদেবীর জীবিতকালে তিনি কালীপুরে থাকিয়া জমানবীসের কার্য করিতেন।
তিনি নদীয়া জেলার অন্তর্গত কুমারখালি গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ মৈত্রের কন্যা বিমলা দেবীর পাণিগ্রহণ করেন। পত্নী ও নিজের নাম সংযোগে উমা-বিমলেশ্বর নামে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছেন।”
বিমলা দেবীর গর্ভে দুর্গাকান্ত ও তারিণীকান্ত নামে দুই ছেলে এবং তারাসুন্দরী, ক্ষেমঙ্করী দেবী ও অন্নপূর্ণা দেবী নামে তিন কন্যা জন্মে। দুর্গাকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী পিতৃ থাকাকালীন অবিবাহিত অবস্থায় পরলোক গমন করেন। একমাত্র পুত্র তারিণীকান্ত লাহিড়িকে রেখে উমাকান্ত লাহিড়ি পরিণত বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।
তারিণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী: তারিণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ইংরেজি ১৮০৭ এবং বাংলা ১২১৪ সালের ১০ মাঘে জামালপুর জেলার মহিরামকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই জমিদারি পরিচালনা করে পিতাকে সহায়তা করতেন। নিজ প্রতিভা বলে তিনি বাংলা ও পারস্য ভাষায় শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তার দক্ষতা ও কার্যকৌশলে অল্পকাল মধ্যেই জমিদারির অত্যধিক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
তিনি শেরপুর ও বগুড়ার কড়ই প্রভৃতি কয়েকটি নূতন জমিদারি ক্রয় করে স্বীয় সম্পত্তির আয় ও আয়তন বৃদ্ধি করেছিলেন এবং সৌভাগ্যলক্ষ্মীর পূর্ণ দৃষ্টি লাভ করে ধনে ঐশ্বর্য সমুন্নত হয়েছিলেন। তারিণীকান্ত যশোহর জেলার অন্তর্গত সৌলমারি গ্রাম নিবাসী রামানন্দ চক্রবর্তীর কন্যা ভবসুন্দরী দেবীকে বিয়ে করেন। তার গর্ভে শিবসুন্দরী নামে এক কন্যা এবং বরদাকান্ত লাহিড়ি ও অম্বিকাকান্ত লাহিড়ি নামক দুই পুত্র জন্মে। বরদাকান্ত শৈশবাবস্থাতেই মৃত্যু হয়। অম্বিকাকান্ত প্রথমত এক বিবাহ করেন, কিন্তু প্রথম স্ত্রীর অকালে মৃত্যু হলে তিনি প্রসন্নময়ী দেবীকে বিয়ে করেন।
অম্বিকাকান্ত লাহিড়ি সম্বন্ধে জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায় চৌধুরীর উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে,”অম্বিকাকান্ত প্রসন্নময়ী দেবীকে বিবাহ করিয়া প্রথম যৌবনেই পিতামাতা ও স্ত্রীর বক্ষে শোকশেল বিদ্ধ করিয়া কালগ্রাসে পতিত হন। এইরূপে তারিণীকান্তের দুইটি পুত্র অকালে কালগ্রাসে পতিত হওয়ায় দত্তক গ্রহণপূর্বক পিতৃপিণ্ড অব্যাহত রাখা ভিন্ন উপায়ান্তর রহিল না। এই জন্য তিনি ব্রজসুন্দর মৈত্রের পুত্র মহিমচন্দ্রকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করিয়া ধরণীকান্ত নাম রাখেন।” কালীপুরের ছোটতরফ জমিদার তারিণীকান্ত লাহিড়ি তার একমাত্র কন্যা শিবসুন্দরী দেবীকে গোবিন্দপুর নিবাসী কৈলাসচন্দ্র সান্যালের সঙ্গে বিয়ে দেন। তারিণীকান্ত লাহিড়ি তার মেয়ে ও জামাতার ভরণপোষণের জন্য প্রচুর অর্থ ও উপযুক্ত তালুক প্রদান করে গৌরীপুর শহরের উত্তরের দিকে ভালুকা এলাকায় বাসভবন নির্মাণ করে দেন। তখন থেকে এটি ভালুকা এস্টেট জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত লাভ করে।
ভালুকা এস্টেট জমিদারবাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস “কালীপুরের ইতিহাস, পর্ব-৫ : গৌরীপুরে ইতিহাসের পাতায় ভালুকা স্টেইট জামিদারবাড়ি” এর শিরোনামে তথ্যবহুল” পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স-২০২৩” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। তারিণীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী সংসারের কর্তব্যকর্ম শেষ করে ইংরেজি ১৮৮৪ এবং বাংলা ১২৯১ সালের ১০ পৌষে পরলোক গমন করেন।
ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী: ইংরেজি ১৮৮৪ সালে তারিণীকান্তের মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র ধরণীকান্তই কালীপুর ছোট তরফের সম্পত্তির অধিকারী হলেন। তিনি বাল্যকাল থেকেই প্রতিভাশালী, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও সৌজন্যের জন্য লোকপ্রিয় হয়েছিলেন। জমিদার ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরীর সম্বন্ধে জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায় চৌধুরীর উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে,” বীরোচিত ক্রীড়ায়, মল্লযুদ্ধে তাহার বাল্যাবধিই আসক্তি ছিল। মৃগয়া কার্যে তাহার যথেষ্ট দক্ষতা আছে। মৃগয়ার জন্য অনেক সময়ে তিনি বহু বিপদকেও আলিঙ্গন করিয়াছেন, এমনকি বহুবার মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা পাইয়াছেন।”
ধরণীকান্তের দেশভ্রমণ ও বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ তার বিখ্যাত গ্রন্থ “ভারত ভ্রমণ” ( ৮০৭ পৃষ্ঠা বই): ধরণীকান্তের দেশ ভ্রমণের অনুরাগ বড়ই প্রবল। ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ভারতবর্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন জায়গায় ভ্রমণ করে একটি ভ্রমণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ধরণীকান্তের ৮০৭ পৃষ্ঠার বিখ্যাত “ভারত ভ্রমণ” গ্রন্থে রয়েছে লাহোর, মুরাদবাদ, বোম্বাই, দিল্লী, জৌনপুর, কাশী,মুরাদাবাদ, করাচী, কানপুর, আগ্রাসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও দুর্লভ ছবি।
“ভারত ভ্রমণ” বই সম্বন্ধে জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায় চৌধুরীর উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে,” তিনি ভারতবর্ষের একপ্রান্ত হইতে অপর প্রান্তের প্রধান প্রধান নগরীসকল পরিভ্রমণ করিয়া প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছেন। ইহা ছাড়া আত্মজীবনকে তুচ্ছ বোধ করিয়া বিপদসঙ্কুল পার্বত্যপথ অতিক্রমপূর্বক দেশ- দর্শন-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিয়াছেন। ছোটলাট বাহাদুর পর্যন্ত তাহার এই ভ্রমণপ্রিয়তার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছেন।
সম্প্রতি তিনি “ভারত ভ্রমণ” নামে এক বৃহৎ গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া বাংলা সাহিত্যের অশেষ উপকার করিয়াছেন।”
উল্লেখ্য যে,ধরণীকান্তের ৮০৭ পৃষ্ঠার বিখ্যাত “ভারত ভ্রমণ” গ্রন্থ হতে ভারত ভ্রমণের ভূমিকা ও “ভারত ভ্রমণ : জৌনপুর” এর শিরোনামে তথ্যবহুল” পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স-২০২৩” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
ধরণীকান্তের মিতব্যয়িতা: ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী মিতব্যয়ী ছিলেন। বৈধ ব্যয়ে তার কিছুমাত্র কুণ্ঠা নেই। ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত দাতব্য চিকিৎসালয়ের উন্নতিকল্পে তিনি এককালীন ১০,০০০ হাজার টাকা দান করেছিলেন। ইহা ছাড়াও তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানও যথেষ্ট ছিল।
ধরণীকান্তের পারিবারিক বিবরণ: ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী রামগোপালপুরের কাশীকিশোর রায়চৌধুরির কন্যা রামরঙ্গিণী দেবীকে বিয়ে করেন। রামরঙ্গিণী দেবীর গর্ভে মহেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ও নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী নামে দুই পুত্র এবং নীরদকামিনী দেবী নামে এক কন্যা জন্মে। মহেন্দ্রকান্ত অবিবাহিত অবস্থায় পরলোক গমন করেন। কন্যা নীরদকামিনীকে নদীয়া জেলার অন্তর্গত কিফাইতপুর গ্রামের অবিনাশচন্দ্র সান্যালের সঙ্গে বিয়ে দেন।
নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি প্রথমত মুক্তাগাছার সুপ্রসিদ্ধ জমিদার জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরির কন্যা নগেন্দ্রবালা দেবীকে বিয়ে করেন। কিন্তু নগেন্দ্রবালা দেবীর গর্ভে ধীরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী নামে একটি মাত্র ছেলে শৈশব অবস্থায় রেখে অকালে মৃত্যু বরণ করেন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী দুর্গাপুর সুসঙ্গ রাজবংশের সুনীতিবালা দেবীকে বিয়ে করেন। সুনীতিবালা দেবীর গর্ভে রীতেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ও হীরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী নামক দুই পুত্র এবং এক কন্যা জন্মে।
কালীপুর ছোটতরফ জমিদারবাড়ির দুইটি হিস্যা: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পৌর এলাকায় বর্তমানে গৌরীপুর থানা, উপজেলা ভূমি অফিস, হর্টিকালচার সেন্টার, কৃষি অফিস, বাগান বাড়ি নিয়ে ছিল ধরণীকান্ত লাহিড়ির ছোটতরফ জমিদারবাড়ি। গৌরীপুর থানার অংশটা ছিল ধরণীকান্ত লাহিড়ির মূল জমিদারবাড়ি এবং থানার সামনে রাস্তার পূর্ব লাইনে ছিল বিশাল বাগান ও পিলখানা বা হাতির আস্তাবল। এই জমিদার বাড়ির বাগানে বর্তমানে একটি স্থানের নাম ‘বাগান বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ‘বাগান বাড়ি’ এর নাম কেন হয়েছে তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
ইতিহাস বলে, বাবা ও ছেলে একে অপরের কাছের মানুষ হওয়া সত্বেও ছেলে নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী দুর্গাপুর সুসঙ্গ রাজবংশের সুনীতিবালা দেবীকে বিয়ে করার পর থেকেই পিতা ধরণীকান্ত লাহিড়ি ও পুত্রের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। বাবার সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটাই জটিল হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় বাগানে কাঠ এবং বাঁশের তৈরিকৃত ছন বা খড়ের ঘর; এর ফলেই নাম হয় বাগান বাড়ি। উল্লেখ্য যে, ধরণীকান্ত লাহিড়ির মৃত্যুর পর বাগানের পিলখানায় সৃষ্টি হয়েছে বিংশ শতাব্দির পাশ্চাত্য ডিজাইনের জমিদারবাড়ি। তাছাড়া কালীপুর ছোটতরফ জমিদারবাড়ির দুইটি হিস্যার তথ্যের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
ধরণীকান্ত লাহিড়ির অতি আদরের নাতনির নামে ডি.কে. লাহিড়ির নতুন জমিদারবাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস “কালীপুরের ইতিহাস পর্ব-৬ : ধীরেন্দ্রকান্তের স্মৃতিবিজড়িত ডি.কে. লাহিড়ি জমিদারবাড়ি” এর শিরোনামে তথ্যবহুল” পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স-২০২৩” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। ধরণীকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী ২৯ নভেম্বর, ১৯১৮ সালে পরলোক গমন করেন।
কালীপুর ছোটতরফ জমিদারবাড়ি নিয়ে নানান কথা: কালীপুর ছোটতরফ জমিদারবাড়ি নিয়ে নানান কথা রয়েছে। রয়েছে পারিবারিক রাজনীতির অজানা ইতিহাস। ১৯১১ সাল হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই ৩৬ বছরের জমিদারির ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ির ২য় স্ত্রীর গর্ভে রীতেন্দ্রকান্ত লাহিড়ি ও হীরেন্দ্রকান্ত নামক দুই পুত্র এবং তাদের পারিবারিক জীবন ও তাদের বাসস্থানের অবস্থান ও ইতিহাস।
ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাফেয়ার্স-এর যৌথ উদ্যোগে মোমেনসিং ও জাফরশাহী পরগনার প্রাচীন নিদর্শন খোঁজার জন্য ২০২০ হতে জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান প্রজন্ম জমিদারির সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। ২০২৩ সালে গৌরীপুরের ঐতিহাসিক কালীপুর এলাকায় জরিপের সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে ছোটতরফ জমিদারি বিষয়ে কথা হয়।
সাংবাদিক হুমায়ন আহমেদ বলেন (৫৮) বলেন, কালীপুর ছোটতরফ জমিদারির এজমালীর সম্পত্তির একটি অংশ হিসেবে গঙ্গাসাগর দীঘির দক্ষিণ পাড়ে ছয় একর জায়গা জুড়ে একটি বাড়ি ছিল যা রীতেন্দ্রকান্ত লাহিড়ির বাড়ি হিসেবে পরিচিত। একটি মামলার বাদী এবং বিবাদী রীতেন্দ্রকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী বনাম ধীরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী এর তথ্য থেকে জানা যায় যে, ময়মনসিংহ কালেক্টরের অধীনে তৌজি নং ৫২৫৪। বাদী এবং বিবাদী ১ ও ২ সৎ ভাই হিসেবে সম্পর্কযুক্ত। প্রয়াত ধরণীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী ছিলেন তাদের পিতামহ এবং উপরোক্ত তৌজির মালিক ছিলেন। ধরণী কান্ত লাহিড়ী ১৯১৮সালের ২৯ শে নভেম্বরে মৃত্যু বরণ করেনএবং তার ছেলে নরেন্দ্র কান্ত লাহিড়ী ১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে মৃত্যুবরণ করেন। “কালীপুরের ইতিহাস পর্ব-৬ : ধীরেন্দ্রকান্তের স্মৃতিবিজড়িত ডি.কে. লাহিড়ি জমিদারবাড়ি” এর শিরোনামে ইতিহাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর কালীপুরের ইতিহাস সমাপ্ত হয়েছে।
তথ্য সূত্র:
১. ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার— শ্রী শৌরীন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী (রামগোপালপুর এস্টেট এর জমিদার ও রাজা যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ৩য় পুত্র)
২. ময়মনসিংহের ইতিহাস ও ময়মনসিংহের বিবরণ— শ্রী কেদারনাথ মজুমদার
৩. ময়মনসিংহের জমিদারি ও ভূমিস্বত্ব— মো. হাফিজুর রহমান ভূঞা
৪. ব্রিটিশ ভূবিদ মেজর জেমস রেনেলের অংকিত কয়েকটি মানচিত্র
৫. সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে— ভারত উপমহাদেশের অন্যতম কৃতী ইতিহাসবিদ ও প্রফেসর ড. অমলেন্দু দে
৬. নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস— আলী আহম্মদ খান আইয়োব
৭. উইকিপিডিয়ার উল্লেখিত শিরোনামগুলো থেকে (ক) গৌরীপুর উপজেলা – উইকিপিডিয়া (খ) কলকাতা – উইকিপিডিয়া
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.