লালমনিরহাট প্রতিনিধি:এবার বিনা চাষে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদ করেছেন লালমনিরহটের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। বিনা খরচে সরিষা আবাদ করে ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা তাদের। আগামীতে সরিষার আবাদ আরও বাড়বে বলছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, বিনা চাষে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদ করে লাভবান হবেন কৃষকরা। এভাবে সরিষা চাষে একজনকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অন্যজন কৃষক।
কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউনিয়নের তালুক বানীনগর এলাকার কৃষক সুমন মিয়া, মনিরুজ্জামান, সোহাগ রহমান। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শসহ প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার পেয়ে ৬ বিঘা জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন। এই আবাদে তাদের কোন খরচ হয়নি। তারা নিজেরাই সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা করেন। সরিষার বাম্পার ফলন হবে এবং লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা এই কৃষকদের।
সরিষা চাষী সুমন মিয়া বিটিসি নিউজকে জানান, বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এটা তার জানা ছিল না। পরে মোবাইলে ইউটিউবে বিনা চাষে সরিষার আবাদের বিষয়টি তিনি প্রত্যক্ষ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হন। এরপর কৃষি বিভাগ থেকে ১ কেজি বারি সরিষা ১৭ বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি পেয়েছেন। রোপা আমন ধান কাটার পরে গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে ওই জমিতে কোনোরকম চাষ না দিয়েই বিনা চাষে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই সরিষার চারা গজিয়ে ওঠে। এরপর প্রণোদনার সার জমিতে প্রয়োগ করেছেন। নিড়ানিসহ খরচ ছাড়াই এভাবেই সরিষার আবাদ করেন। এখন ফুল এসে সরিষার মাঠজুড়ে হলুদ রঙ ধারণ করেছে। বাম্পার ফলন আশা করছেন সুমন।
শুধু সুমন মিয়া নন, তার মতো অনেক কৃষকই চলতি মৌসুমে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন। বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
কাকিনা ইউনিয়নের গোপালরায় গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এটা তার জানা ছিল না। বানীনগর এলাকার কৃষক সুমম মিয়ার বিনাচাষে সরিষা আবাদ করা তিনি দেখেছেন। আগামীতে তিনিও আবাদ করবেন। বিনা খরচে এবং লাভজনক হওয়ায় আগামীতে অনেক কৃষক এই সরিষার আবাদ করবেন বলে জানান তিনি।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের বানীনগর এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটার আগেই ওই জমিতে সরিষা বীজ বপন করেন। এর ১৫ দিন পরে আমন ধান কেটে ফেলেন। ওই জমিতে সরিষার চারা গজিয়ে ওঠে। পরে কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া সার জমিতে প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া আর কোনও খরচ করতে হয়নি সরিষা আবাদে।
সরিষা পাক ধরে আসায় আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সরিষা কেটে ঘরে তোলা যাবে। এরপর সরিষা বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে জমিতে বোরো ধান আবাদের প্রস্তুতি নিবেন তিনি। আগামীতে আমার দেখে এলাকার অনেক কৃষক আমন ধান কাটার আগে সরিষা বীজ জমিতে বপন করবে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলায় কাকিনা, চলবলা, দলগ্রাম ও তুষভান্ডার ইউনিয়ন মিলে মোট ২০ বিঘা জমিতে ধান থাকা অবস্থায় কৃষকরা বিনা চাষে সরিষা আবাদ করেছে। চলতি মৌসুমে দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। অনুকূল পরিবেশে কৃষকদের সময়োপযোগী উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বিটিসি নিউজকে জানায়, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকরা। সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে বারি সরিষা ১৭ বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে। আমন ধান কাটার পর বোরো ধান শুরু করার আগ পর্যন্ত প্রায় ৯০ দিন জমিটি পড়ে থাকে৷ এই পতিত সময়ে ওই জমিতে সরিষা আবাদ করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনা চাষে সরিষা আবাদে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। অনেকে পরামর্শ অনুযায়ী সরিষা আবাদ করেছে। বিনা চাষে লাভজনক হওয়ায় আগামীতে সরিষা আবাদে কৃষকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিনা চাষে সরিষা আবাদ সারা দেশে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.