কাঁদলেন-কাঁদালেন এসপি ইকবাল হোসেন

 

নওগাঁ প্রতিনিধি:  নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) মো: ইকবাল হোসেন পিপিএম এর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যোগদান করবেন রংপুরে। শনিবার বিকেলে পুলিশ লাইনস ড্রিল সেডে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। পুলিশ লাইনে পৌঁছলে তাকে জেলা পুলিশ গার্ড অফ অনার দেয়া এবং দুই সারিতে দাঁড়িয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরন করে নেয়া হয়।

বিদায় সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন) মুহাম্মদ রাশিদুল হক। বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এসপি ইকবাল হোসেন। একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। তার কান্না দেখে অন্যরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমন রায়, আহম্মদ আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, সহকারী পুলিশ সুপার মতিয়ার রহমান, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী মাহফুজা আখতার, ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ জাকিরুল ইসলাম, আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোসলেম উদ্দীন প্রমুখ।

জেলা পুলিশের রীতি অনুযায়ী গাড়ীতে রশি বেঁধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে সকল সদস্যরা টেনে গেট পার করে দেন। সে সময় দুই ধারে শেষ বারের মত ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানানো হয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, তার সহধর্মীনি মাহফুজা আখতার ও তার দুই ছেলে।

এসপির বদলীতে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, থানা পুলিশ ও পুলিশ সদস্যরা বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন। গত ২০১৭ সালের ২ আগষ্ট পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ২ বছর ১ মাস কর্মজীবনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। সামান্য এ সময়ে তিনি জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। তিনি পুলিশ লাইন, ব্যারাক, বাসভবন ও থানার অনেক উন্নয়ন করেছেন।

জানাগেছে, ১৯৬৯ সালের ১জুন পাবনা জেলার সাথীয়া থানার শিয়ালন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ইকবাল হোসেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে সম্মান অর্জন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৬তম বিসিএস প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। দক্ষতা ও কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ আইজি ব্যাচ ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল পান।

তিনি মালেশিয়া, অট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পুলিশিং কার্যক্রমের অভিজ্ঞতায় পুলিশ বাহিনীকে করেছেন সমৃদ্ধ। পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তুলেছেন ‘কুইক রেসপন্স টিম’ যা ‘কিউআরটি’ নামে পরিচিত। এই টিমের মাধ্যমে যেকোন জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম। টিম টি ভিআইপি প্রকেটশনেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এসবই ছিল তার দুরদর্শি চিন্তা ভাবনা।

দূর্ঘটনা স্থলগুলো তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করতেন। নওগাঁ সদরে গৃহবধু মিনি ও পত্নীতলা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ইছাহাক আলী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যোগদানের পর জেলায় মাদকদ্রব্য অনেকটা কমে গিয়েছে। সোস্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত জটিলায় তিনি অনেকটা সফল। শহরের স্বর্ণের দোকানে প্রায় ৫ কোটি টাকার স্বর্ণ চুরি ও বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি ঘটনাগুলোর দ্রুত রহস্য উন্মোচন করেছেন। এসবের সাথে যুক্ত মুল হোতাদের আটক করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইভটিজিং, কিশোর অপরাধ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন কার্যকর পুলিশি ব্যবস্থা। জনসচেতনতা মুলক কর্মসূচী গ্রহন করেছেন। সাধারন মানুষের সাথে সহজেই মিশে যেতেন। বিপদে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নদীভাঙ্গন এলাকায় ত্রান নিয়ে ছুটে গেছেন। এসব কারণে তিনি খুব সহজেই জনগণের আস্থাভাজন হতে পেরেছেন। জেলার মান্দায় স্বেচ্ছাসেবক ট্রাফিক আজাহার আলীকে করে দিয়েছেন বাসস্থান। জাতীয় সমস্যা ‘ডেঙ্গু মশা নিধনে’ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে মাধ্যমে পুলিশ ও নাগরিক সমাজকে একত্র করেছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ায় তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

জেলা পুলিশ লাইন ও পুলিশ সুপার কার্যালয়কে দৃষ্টি নন্দন করে সাজিয়েছেন। জেলা পুলিশ লাইন ব্যারাকে বসবাসরত পুলিশ সদস্যের জন্য তৈরী করছেন ‘ওয়াটার হাউজ’। পুলিশ সদস্যের শারীরিক চর্চার জন্য ‘জিমাগার’ স্থাপন করা হয়েছে। অপঘাতে মৃত্যু প্রতিটি থানায় নির্মাণ করেছেন ‘প্রাক ময়নাতদন্ত কক্ষ।’

তিনি ব্যতিক্রম ভাবে পুলিশ লাইন ড্রিল সেডে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার পথ প্রসস্থ করতে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষক নিয়োগসহ ‘আই ড্রিম স্কুল’ তৈরী করা হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন বিনা খরচে শিক্ষা গ্রহণ করছে অবহেলিত শতাধিক শিশু।

 

পুলিশ সুপারের বাংলোতে তৈরী করা হয়েছে সুইমিংপুল। যেখানে পুলিশ অফিসারদের পরিবার ও পুলিশ সদস্যরা ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পড়ন্ত বিকেলে ছোট যমুনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য তৈরী করা হয়েছে ‘ওয়ার্চ টাওয়ার’। বাংলোতে বসবাসরত ও আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে পুরনো মসজিদকে সংস্কার করে মুসলিম কৃষ্টির সমন্বয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ তৈরী করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে পুলিশ বাহিনীতে ১০৩ টাকার বিনিময়ে কোন ধরনের উৎকোচ ছাড়াই ১২০জনকে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.